আতঙ্কে কাটছে চাঁদগড়ের বেড়িবাঁধ বাসিন্দাদের

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৬:৪৯:৫৪ পিএম

শেখ আব্দুস সালাম, চুকনগর: ডুমুরিয়া উপজেলার চাঁদগড় গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মতলেবুর রহমান। স্ত্রী ফিরোজা বেগম। তাদের  গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, বাড়ির উঠানে চরে বেড়াতো হাঁস-মুরগি। আজ সে সব অতীত। এখন তাদের ঠাঁই হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে। শুধু ফিরোজা বেগম নয়, এভাবে জবেদ আলী, হাবিবুর রহমানদের ঠাঁই হয়েছে বেড়িবাঁধে। প্রায় তিনযুগ ধরে ভদ্রা নদীর ভাঙনে ২৯ নম্বর পোল্ডারের জালিয়াখালী, বারোআড়িয়া, শরাফপুর, চাঁদগড় গ্রামের দেড়শতাধিক পরিবার আজ গৃহহীন।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৯ নম্বর পোল্ডারের স্বাধীনতার পর থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের জেলেখালী ও চাঁদগড় দুটি গ্রাম ভদ্রা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হতে চলেছে। নদীগর্ভে সর্বস্ব হারারো মানুষের জিজ্ঞাসা এ ভাঙন  রোধ হবে কি? সে প্রশ্ন মাঝেমধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙন রোধের নামে নামমাত্র কাজ করে থাকলেও নেই কোনো স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা।

শুষ্ক মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেঙে যাওয়া বাঁেধ মেরামতের নামে স্থানীয় লোকদের নিয়ে কাজ করে জোড়াতালি দেয়। কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে না।

চাঁদগড় গ্রামের বসিন্দা জবেদ আলী বিশ^াস (৭০) জানান,  প্রায় ৫০ বছর যাবৎ ভাঙন দেখছি। ভাঙন হলেই পানি উন্নযন বোর্ড যেনতেন ভাবে মেরামত করে। অথচ কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হলেও স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। একই গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড অর্থ লুটপাট করছে বলে মনে হয়। না হলে যেনতেন ভাবে বাঁধ কেন আটকানো হবে। দীর্ঘদিন ভাঙন চলে আসলেও প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা কেন নেয়া হয় না। তিনি বলেন কয়েকবছর আগে চাঁদগদের এই স্থানে ভেঙে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সে সময়ে ৫০ এর অধিক পরিবার ভিটেমাটি হারা হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে এখন পর্যন্ত বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা আরো জানান ১৯৬৭-৬৮ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন  বোর্ডের আওতাধীন নির্মাণ করা ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৯ পোল্ডার এর বেহাল দশার কারণে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৫৫ গ্রাম নদী ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।  প্রতি বছর বর্ষা মওসুম এলে ৩-৪ বার বাড়িঘর, জমি, গাছপালা ও বেড়িবাঁধ ধসে নদীতে চলে যায়। পানি উন্নয়ন  বোর্ডের কর্তৃপক্ষের নজর পড়ে। তড়িঘড়ি করে নুতন করে বাঁধ  দেয়ার কাজ হয়। কিন্তু নদীর প্রবল  ¯্রােতে বাঁধগুলো নদীগর্ভে চলে যায়। ইতোমধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের  দেড় কিলোমিটার বিস্তীর্ণ জালিয়াখালি গ্রাম ভদ্রা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২শতাধিক মানুষ। শতাধিক কাঁচাপাকা ঘরবাড়িসহ কয়েক একর জমি হারিয়েছে মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডুমুরিয়া উপজেলা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, চাঁদগড়সহ ২৯ নম্বর পোল্ডারের ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া ভেঙে যাওয়া বাঁেধর অংশে নতুন করে বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে মাটি বালিযুক্ত তাই এটি পানির চাপ তেমন ধরে রাখতে পারে না।