মণিরামপুরে প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:২৭:৩৬ পিএম

মণিরামপুর প্রতিনিধি : মণিরামপুরে প্রতিবন্ধীসহ বয়ষ্ক ও বিধবাদের ভাতার টাকা ছিনিয়ে নিলেন ইউপি সদস্য মো. মোক্তাদির এবং ইউনিয়ন উদ্যোক্তা সেলিম রেজা। ইউনিয়নের দায়িত্বরত সমাজকর্মী চন্দনা সরকারের উপস্থিতিতে ঈদের ২দিন আগে বৃহষ্পতিবার (৭ জুলাই) ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সদর (মণিরামপুর) ইউনিয়ন পরিষদে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগিরা টাকা ফেরত চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

ইউনিয়নের ৯ নম্বর (শোলাকুড়-জালঝাড়া আংশিক) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন জানান, ‘সরকার গ্রামীণ দারিদ্র জনগোষ্ঠির দুঃখ-দূর্দশা লাঘবের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি, ভিজিএফ, ভিজিডি’র প্রকল্পের আওতায় নগদ অর্থ ও বিভিন্ন দ্রব্য বিতরণসহ প্রতিবন্ধী, বয়ষ্ক, বিধবা ও গর্ভবর্তী মায়েদের ভাতা প্রদান করে যাচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় মণিরামপুর সদর ইউনিয়নে ২০২১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১ বছরের এ তালিকায় নতুন ২৫ প্রতিবন্ধী এবং ১২ বয়ষ্ক ও বিধবাসহ মোট ৩৭ নতুন ভাতার কার্ড অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। জনপ্রতি প্রতিবন্ধীরা মাসিক ৭৫০ টাকা হারে ১২ মাসে মোট পাবেন ৯ হাজার এবং বয়ষ্ক ও বিধবা কার্ড প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হিসেবে ৯ মাসে পাবেন ৪ হাজার ৫শ’ টাকা। কিন্তু নতুন ভাতার কার্ড প্রাপ্তদের অভিযোগ প্রতিটি নতুন তালিকাভুক্ত কার্ডধারীদের থেকে সদর ইউনিয়নের ৪ নম্বর (দেবিদাসপুর) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোক্তাদির ও ইউনিয়ন উদ্যোক্তা (ইউডিসি) সেলিম রেজা-ইউনিয়নে দায়িত্বরত সমাজ কর্মী চন্দনা সরকারের উপস্থিতিতে ১ থেকে ২ হাজার টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়েছে। যেহেতু নতুন তালিকায় অর্ন্তভুক্ত হলে ইউনিয়ন পরিষদের ইফডিসি’র মাধ্যমে প্রথম টাকা উত্তোলন করতে হয়। ফলে এ সুযোগটি গ্রহণ করেছেন, সমাজকর্মী বন্ধনা সরকার, ইউপি সদস্য মো. মোক্তাদির ও ইফডিসি’র দায়িত্বে থাকা সেলিম রেজা। বিষয়টি জানাজানি হলে ইউনিয়নে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে এখন ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকিসহ বিকল্প ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ একই বক্তব্য পেশ করেছেন ১ নম্বর (বাকোশপোল) ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন, ২ নম্বর-(সোনাডাঙ্গা-বাকোশপোল আংশিক) ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন, ৮ নম্বর-(খর্দ্দ গাংড়া-জালঝাড়া আংশিক) ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সফিয়ার রহমান।

ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী হোসেন আলী বলেন, ‘ঈদের ২দিন আগে সারাদিন কষ্ট করে ভাতার টাকা উত্তোলন করে চলে আসার সময়ে ইউপি সদস্য মোক্তাদির, ইউডিসি সেলিম রেজা ও সমাজকর্মী চন্দনা সরকার জোরপূর্বক আমার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’ তিনি ভাতার টাকা ফেরতসহ দোষীদের শাস্তি দাবি করেন। একই রকম বক্তব্য প্রদান করেন ভুক্তভোগী জসিম, রুস্তম আলী, আতিয়ার রহমান, আব্দুর রহিম, রবিউল ইসলামসহ অধিকাংশরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী ক্ষোভের সাথে বলেন, যদি টাকা নেয়ার কথা বলে দেই-তবে তার কার্ড বাতিল করে দেয়া হবে। কার্ড বাতিল হবার ভয়ে অনেকেই এখন মুখ বন্ধ করে রেখেছে।

ইউডিসি’র দায়িত্বে থাকা সেলিম রেজা বলেন, ‘টাকা উত্তোলন করে সবার হাতে দিয়েছি। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। ইউপি সদস্য মো. মোক্তাদির তাদের সাথে কথা বলছিলো। 

সমাজকর্মী চন্দনা সরকার বলেন, ‘আমি সেখানে ছিলাম। তবে টাকা আমি নেইনি, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে টাকা নিয়েছে ইউপি সদস্য মোক্তাদির ও উদ্যোক্তা সেলিম রেজা। টাকা নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে-ভুক্তভোগীদের সাথে আপোষ করা হয়েছে বলে শুনেছি।’ আপোষ করেছেন কে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদেুাত্তর দিতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোক্তাদির বলেন, ‘আমি নতুন তালিকাভুক্তদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। আমাকে বির্তর্কিত করার জন্য একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক বলেন, প্রতিবন্ধী বা অন্যান্য ভাতা প্রাপ্তদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পরিষদ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি।

সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করার জন্য প্রভাষক ফিরোজ আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগটি আমার হাতে এখনও হাতে আসেনি। হাতে পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতর থেকে এক ভুক্তভোগীর যথাযথ প্রতিকারের জন্য দায়ের করা অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।