অভয়নগরে লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন, টর্চ জ্বালিয়ে চিকিৎসা

এখন সময়: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:২৩:৪৫ পিএম

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের অভয়নগরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন। কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়ার লুকোচুরি খেলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে ক্ষত সেলাই করছে চিকিৎসক। জানা গেছে, এই ভাবেই রাতের আধারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতাল গেট এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুৎ চলে গেলে সেখানে বিরাজ করে এক ভুতুড়ে পরিবেশ। চারদিকে অন্ধকার শুধু মাত্র মোবাইল এর আলো ই যেনো এক মাত্র ভরসা। লোডশেডিং শুরু হলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাসপাতালে ভর্তি সহ সেবা নিতে আসা রোগীদের। সোমবার (২৫ জুলাই) রাত ৮:১৫ এর সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, দেয়াপাড়া এলাকায় গাছ কাটতে গিয়ে দায়ের কোপে হাতের দুটি রগ কেটে যায়। পরে তরিকুল ইসলাম (৫০) কে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে মোবাইল টর্চ জালিয়ে মোবাইলের সামান্য আলোতে। কেটে যাওয়া রগ খুজতে বিড়ম্বনায় পড়েছে চিকিৎসক। ইমার্জেন্সির চিকিৎসক সুস্মিতা বিশ্বাসকে মোবাইলের আলো জালিয়ে এক্সরে পেপার দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে দেখা গেছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এই গরমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা কর্মচারী ও শ্রমজীবী মানুষেরা চরম বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। প্রতিনিয়ত ২ ঘন্টা থেকে ৪ ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিং এ কোনো কাজই করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে ও রাতে অনন্ত ৫ থেকে ৭ বার বিদ্যুৎ চলে যায়। এই লোডশেডিং এর ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসছে না ক্রেতা বলে অভিযোগ করেন। এই অবস্থায় চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। ধোপাদী ও সুন্দলী রোডের ইজিবাইক চালক আমিনুর ইসলাম বলেন, দিনে ও রাতে ৫-৬ বার লোডশেডিংয়ের কারণে অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে পারিনি। রাতের বেলায় বেশি লোডশেডিং চলছে। অটোরিকশা চালাতে না পারলে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারবো না। চেঙ্গুটিয়া এলাকার পোল্টী মুরগি ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান বলেন, ভ্যাপসা গরমে আমার পোল্ট্রী মুরগি মারা যাচ্ছে। তার পর ও লোডশেডিং। কি যে করি। ক্যারেন্ট থাকলে মুরগি গুলোকে বাচাঁনো যেত। ব্যবসায় এবার লোকসান হবে। বিদ্যুতের এমন আসা-যাওয়ার লুকোচুরি খেলায় চরম বেকায়দায় পড়েছি। ফার্ম মালিকরো বলেন, লোডশেডিং শুরু হলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফটোকপি ও কম্পিউটার দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, কিছু কাগজপত্র ফটোকপির কন্টাক্ট নিয়েছি। গ্রাহককে সেগুলো দেবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু যেভাবে সারাদিন ও রাতে ঘন ঘন লোডশেডিং চলছে, তাতে করে মনে হয় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যাবে না। সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং চলছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারছে না। ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, বিদ্যুতের ডিজিটাল মিটার নিয়েছি প্রিপেইড বিল পেইড করছি বিদ্যুৎ নেই পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোগান্তি মধ্যে রয়েছে। সন্ধ্যার সময় কারেন্ট চলে যায় আবার এক ঘণ্টা থাকার পর আবার চলে যায়। এই ঘন ঘন লোডশেডিং এর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। খাদিজা বেগম বলেন, আমার মেয়ের বয়স এক বছর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে কারণে রাতে ঘুমাতে পারে না। প্রচণ্ড গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চেঙ্গুটিয়া অভিযোগ কেন্দ্রের শাহজান ও নওয়াপাড়া অভিযোগ কেন্দ্রের বিপ্লবের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের যে ভাবে কাজ করতে বলা হলে আমরা সেই ভাবে কাজ করি। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত বিষয়ে কথা হলে এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২ এর নওয়াপাড়া জোনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আব্দুলাহ আল মামুন বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও গ্যাস স্বল্পতার কারণে মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়ও বড় বড় শহরে র্নিদৃষ্ট একটি টাইম বেঁধে দেয়া হয়েছে। আমাদের এখানে তেমন কোনো সমস্যা নেই। পাওয়ার গ্রীড থেকে সমস্যা হচ্ছে। তালতলা পাওয়ার গ্রীক আমার আওতায় আছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। আবার আমরা চেষ্টা করছি যাতে সব এলাকাতে ঠিক ভাবে বিদ্যুৎ থাকে। একটা বিষয় কিতাবে আছে তা বাস্তবে নাই। সরকার কোনো নিয়ম বেঁধে দেয়নি। তবে বিদ্যুৎ অপচয় থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।