জমির দখল ফিরে পেতে কাফনের কাপড় জড়িয়ে অনশন

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৮:২৭:০৩ পিএম

শাকিলা ইসলাম জুঁই,সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় বিরোধপূর্ণ জমিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড তুলে দিয়ে অফিস ও ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক তুলকালাম কান্ড তৈরী হযেছে। সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। অপরদিকে ওই জমির দখল ফিরে পেতে কাপনের কাপড় জড়িয়ে  টানা তিন দিন ধরে অনশন করছে ৫টি পরিবার। ঘটনাটি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের। এঘটনায় উভয় পক্ষ সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে একে অপারকে দুষছেন। দখল পাল্টা দখল নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। 

সরেজমিনে জানাযায়, আশাশুনি উপজেলার রাজাপুর মৌজায় এসএ ১১ ও আরএস ২৬৬ খতিয়ানে ২৮৪ ও ২৮৮ দাগে ৫৬ শতক জমির পৈত্রিক মালিক আইয়ুব আলী গাইন, উজির আলী গাইন, শামছুর গাইন গং সহ ৬ জন। স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ওই দুটি দাগসহ মোট ৫টি দাগের মধ্যে ৩ শতক ও তার ভাই আবু সাঈদ ২ শতক জমি শামছুর গাইনের নিকট থেকে ক্রয় করেন। এর পর থেকে ওই জমি নিয়ে ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুলের সঙ্গে আয়ূব আলী গংদের জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলে আসছিল। ওই জমি ফিরে পেতে আয়ুব আলী আদালতে টাকা  জমা দিয়ে আমানত করলে বিজ্ঞ আদালত স্থগিতাদেশ দেন। অথচ বিজ্ঞ আদালতের সেই আদেশ অমান্য করে শহিদুল ইসলাম তড়িঘড়ি করে ওই জমিতে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের অফিস ও জমির বাকী অংশ পাকা ঘর নির্মাণ করে দখলে রেখেছেন। এই ঘটনার পর গত ২৪ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত টানা তিন দিন কাফনের কাপড় পড়ে ওই জমিতে অনশন করে আসছেন আইয়ুব আলী গাইনসহ মোট ৫টি পরিবার। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে পাল্টাপাল্টি সাংবাদিক সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

আইয়ূব আলী গাইন জানান, জমির প্রকৃত মালিক তারা। ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল ও তার ভাই আবু সাঈদ এই জমি ক্রয় করেছেন বলে দাবি করছেন। তারা জমি ফেরত পেতে আদালতে টাকা আমানত করলে ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল আদালত থেকে সেই টাকা তুলে নিয়েছেন। তবে জমি দখল ছেড়ে না দিয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অফিস নির্মাণ করেছে। অফিসের পাশে বসিয়েছে সিসি ক্যামেরা। সেখানে নির্মান করছে বিশাল পাকা ঘর। এজন্য আইয়ূব আলী গং দিনের পর দিন কাপনের কাপড় জড়িয়ে পরিবারের সকল সদস্যরা দখলকৃত ওই অফিস ওঘরের সামনে অনশন করছেন।

ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল জানান, তিনি ও তার ভাই ৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। অন্য দাগে আইয়ূব আলী ও তার পরিবারের লোকেরা বসবাস করে। সে কারণে তিনি এই জায়গা দখলে নিয়ে পাকা ঘর নির্মাণ করছে। তিনি জানান কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তিনি জড়িত নন। তার ভাই ওয়ার্ড আওযামীলীগ নেতা আবু সাঈদ দলীয় সাইন বোর্ড দিয়ে ওই অফিস তৈরি করেছেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু সাঈদ জানান, তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস তৈরি করার জন্য সরকারি ছয় হাজার টাকা ও দুইবান টিন বরাদ্ধ পেয়েছিলেন। সেই অর্থ দিয়ে এই অফিস নির্মাণ করা হয়েছিল। কে বা কারা তার অফিসের ব্যানার ছিঁড়ে দিয়েছে। এজন্য তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে যাতে এই অফিস থেকে  কার্যক্রম পরিচালনা  করতে না পারে সে জন্য কতিপয় লোকজন ষড়যন্ত্র করছে। তবে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের অপর নেতা শহিদুল মন্ডল বলেন আগে এখানে অফিস ছিল না। বিরোধপূর্ণ জমি দখলকে কেন্দ্র করে এই অফিস তৈরি করা হয়েছে।

স্থানীয় আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল সেখানে ঘর নির্মাণ করছে। আর জমির প্রকৃত মালিকরা জমি ফিরে পেতে কাপনের কাপড় পরে অনশন করছেন। তিনি  উভয় পক্ষকে ত্যাগ স্বীকার  করে  বিষয়টা মীমাংসা করে নেয়ার জন্য বলেচেন বলে জানান। 

আশাশুনি  থানার  অফিসার  ইনচার্জ মমিনুল  ইসলাম জানান, এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালত যাকে  রায়  দিবে  সেই  জমি  পাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে উভয় পক্ষকে তিনি শান্ত হতে  বলেছেন।