খুলনাঞ্চলে অর্ধেকের বেশি রেলগেট অরক্ষিত

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০২:৫৬:৪১ পিএম

খুলনা অফিস: খুলনা যশোর অঞ্চলে অর্ধেকের বেশি রেলগেট অনুমোদনহীন ও অরক্ষিত। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন রেলগেট ১৭১টি। যার মধ্যে ৭৩ অনুমোদিত আর অনুমোদন হীন ৮৮টি। আর ১০ টি অনুমোদিত গেটে নেই গেট ম্যান। খুলনা অঞ্চলে রয়েছে নয়টি অনুমোদিত রেলগেট, আর দুটি অনুমোদিত রেলগেট। আর যশোরে রয়েছে ১৬০টি রেল গেট। যার মধ্যে অনুমোদনহীন ৮৬টি, অনুমোদিত ৬৪টি। আর ১০টি অনুমোদিত গেট থাকলেও নেই গেটম্যান।

তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সরোজমিনে খুলনা রেলস্টেশন থেকে দৌলতপুর পর্যন্ত অনুমোদিত রেল গেটে দেখা গেছে অসংখ্য। স্থানীয়দের যাতায়াত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে অনুমোদনহীন অরক্ষিত এই সকল গেট। আবার অনুমোদিত গেটে দেখা যায় না গেট ম্যান যদিও রয়েছে নির্দিষ্ট অফিসও।

নগরীর মুজগুন্নি দিঘীরপার এলাকায় অনুমোদিত গেটে গিয়ে দেখা যায় গেট ম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ। ক্যামেরায় ছবি নেয়ার সময় কিছুক্ষণ পরে হাজির হলেন গেটম্যান আরো একজন। তাদের দাবি ট্রেন যখন স্টেশন থেকে ছাড়ে বা স্টেশনের দিকে যায় তাদের ফোন করে জানানো হয়। তখন তারা একটিভ হন। এর আগে আশপাশেই থাকেন।

দৌলতপুর বাজারের অনুমোদিত গেটে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। সেখানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে ছবি নিলেও গেট ম্যান আসেননি। তবে রেলে পাটির পাশের শরবতের দোকান নিয়ে বসা একজন দূরে সাদা গেঞ্জিপরা একজনকে দেখিয়ে বলেন ঐ হচ্ছে গেট ম্যান।

খুলনা যশোর অঞ্চলের রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন কাজী ওলিউল হক বলেন, স্টেশন থেকে ট্রেন ছারার সময় ও ঢোকার সময় গেট ম্যানদের ফোনে সতর্ক করা হয়। তাদের কাজে গাফিলতি করার সুযোগ নেই। সব সময় মানুষ কর্মস্থলে থাকতে পারে না। হয়তবা আশপাশে ছিল। মুজগুন্নি ও খালিশপুর এলাকার সংযোগ স্থলে দেখাযায় অনুমোদন হীন অরক্ষিত গেট। সেখানে একটি সমাজ সেবামূলক সংগঠনের ব্যানার রয়েছে মানুষকে সতর্ক করার জন্য।

পাশের মুদি দোকানদার সেলিম বলেন, কয়েকদিন আগে এখানে বিএল কলেজ এর একজন মেধাবী ছাত্র দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এখান থেকে আমাদের রাস্তা না থাকায় যানবহন নিয়ে পার হওয়া যায় না। অনেকপথ ঘুরে বাড়ি ঘরে যেতে হয় যানবহন নিয়ে। পায়ে হেটে এই ক্রসিং পার হয়ে খুলনা যশোর রোডে যাওয়া সহজ হওয়ায় মানুষ এই ক্রসিং পার হয়। আর গেট না থাকায় প্রায়শই ঘটে দুর্ঘটনা। কয়েক মাস আগে এখান থেকে একগজ দুরে এক মহিলা মারা যান ট্রেনে কাটা পরে।

ও খান থেকে সামনে এগিয়ে রয়েছে নয়াবাটি হাজি শরিয়ত উল্লাহ বিদ্যালয়। সেখান শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশ করতে হয় অনুমোদন হীন রেল গেট দিয়ে। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র শেখ রহমত ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র লিমন অভিযোগ করেন ঝুঁকি নিয়েই তাদের চলাচল করতে হয়। ছোটরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে এখানে।

একই অবস্থা সরকারি বি এল কলেজের সামনে অনুমোদন হীন রেল গেটেও। রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষ শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, বিএল কলেজের ৪০ হাজারের উপরে ছাত্র। প্রতিদিন কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা এখান দিয়ে যায় কিন্তু কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। মাঝে মাঝে মধ্যেই ছোট খাট দূর্ঘটনা ও হৈ হুল্লোর চলতে থাকে।

একই অভিযোগ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তুহিন এর। তার দাবি ট্রেন চালকরা বিএল কলেজ গেট পার হওয়ার সময় কোন হর্ন দেননা। আর দ্রুত বেগ তো থাকেই। ফলে দুর্ঘটনার প্রবনতা থাকে অনেক।

বিএসএস ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী মোঃ কবিরুল ইসলাম বলেন, আমরা অবিলম্বে এখানে গেট চাই।

এ বিষয়ে খুলনা যশোর অঞ্চলের রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওলিউল হক বলেন, অভিযোগকারী ব্যক্তিরা অনুমোদন হীন রেল গেট ব্যবহার করছেন রেলকে না জানিয়ে। ফলে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার সাথে সাথে ঝুকি বাড়ছে। এগুলোর মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর ব্যবস্থা নেয়া হবে? তবে অনুমোদন হীন রেল গেট ব্যবহারকারীরা আমাদের অবহিত করলে আমরা সেটা বিবেচনায় নিয়ে হয় তাদের আওতায় গেট নির্মাণ হবে। তারাই নিয়োগ করবেন গেট মেন। অথবা গুরুত্ব বিবেচনায় রেল নিজেও গেট তৈরি করে, সেখানে গেট ম্যান নিয়োগ দিয়ে সেবা প্রদানও করত পারে।

এ সময় অনুমোদিত যশোরের ১০ টি গেটে গেট ম্যান না থাকা বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শিঘ্রই এসকল স্থানে গেটম্যান নিয়োগের চাহিদা টপ লেবেলে প্রেরন করা হয়েছে।