যশোর জিলা স্কুলের পুনর্মিলনীতে উৎসবের আমেজ, আজ সমাপনী

এখন সময়: রবিবার, ২৮ এপ্রিল , ২০২৪, ০৩:০৪:৫৮ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : নবীন-প্রবীণ এক প্রাণ-স্লোগানে যশোর জিলা স্কুলের ১৮৬ বছর উদযাপন ও প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলনী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী মিলন মেলা শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারসহ অতিথিরা ১৮৬ টি বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন। স্কুলটির প্রাক্তন ছাত্র সমিতি এই পুর্নমিলনীর আয়োজন করেছে।
১৯৭০ সালে এই স্কুলে প্রথম পদার্পণ করেছিলাম। সেই সময়ের অনুভূতি আর এখনকার অনুভূতি ভিন্ন। আজকের এই অনুষ্ঠানে এসে ফিরে গেলাম ৭০ দশকে। শহরের চোরমারা দিঘিরপাড় থেকে হেঁটে হেঁটে স্কুলে আসতাম। পড়া না পারলে স্যারদের বেত্রাঘাত। পরে আবার আলাদা করে ডেকে আদর করা। সেই স্মৃতিটা আজকে বেশি মনে পড়ছে। স্যারদের প্রতি ছিল আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা। বারবার তাকাচ্ছি পুরনো সব ভবনের দিকে। আমার সেই ক্লাস রুমের দিকে। আগে যেমন ছিলো, এখন তেমনটা নেই। অনেক স্থাপনা বেড়েছে। এই বয়সে অনেক নবীন প্রবীণদের দেখে ভালো লাগছে।
যশোর জিলা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শুক্রবার বিকেলে ঝিনইদহ -৩ (মহেশপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাহ উদ্দিন মিয়াজী এসব কথা বলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন।
স্মৃতিচারণ করে ১৯৬০ ব্যাচের গোলাম ফারুক বলেন, অনেক বয়স হয়ে গেছে। জানি না কতদিন আর বাঁচবো। এমন আয়োজন যেন আমাকে আরও বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা যোগাল।
একই ব্যাচের মেজর জেনারেল জামিল ডি আহসান বলেন, এই মিলন মেলায় একই সঙ্গে স্কুলের চেনা-অচেনা অনেককে দেখতে পেয়ে আনন্দ লাগছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের প্রভাষক ডা. আলাউদ্দিন আল মামুন স্মৃতিচারণ করে বলেন, এ আয়োজন ঘিরে যে প্রাণের স্পন্দন তৈরি হয়েছে, সেটি যেন আমাকেও স্পর্শ করছে। এমন আয়োজন জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এ বন্ধন যেন ভবিষ্যতেও অটুট থাকে।’
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, পুনর্মিলনীতে এসে মনে পড়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ে পড়ার সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো। আমরা যেদিন বিদায় নিয়েছিলাম, সেদিন সহপাঠীদের বলেছিলাম, আবার দেখা হবে। কিন্তু বাস্তবতার কারণে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি এরপর থেকে। স্কুলজীবনের একটি ঘটনা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘স্কুল বন্ধ করতাম খুব। পরের দিন স্কুলে এসে বলতাম স্যার অসুস্থ ছিলাম। প্রায় অসুস্থতার কথা বলে স্কুল বন্ধ করতাম। পরবর্তীতে শ্রেণীশিক্ষকের কাছে মার খেয়ে স্কুল বন্ধ করা বাদ দিয়েদিলাম। পুনর্মিলনীতে এসে আবার তাদের সঙ্গে দেখা হলো। সত্যি ইনস্টালজিক হয়ে পড়েছি আমরা।’
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন, বহু বছর পর বিদ্যালয়ের পরিচিত মুখগুলো একসঙ্গে আজ। ছোটবেলার সেই রঙিন দিনগুলো বারবার মনে পড়ছে। এই মিলনমেলা যেন আমাদের সামনে এগিয়ে চলার শক্তি আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’
জিলা স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থী অর্জন বলেন, এ স্কুলে আমার দাদা পড়েছে, বাবা চাচারা পড়েছেন, আমি পড়ছি, আমরা ছোট ভাইও পড়ছে। নবীন প্রবীনদের একসাথে পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।
সরেজমিন দেখা যায়, জিলা স্কুলের মাঠে টানানো হয়েছে শামিয়ানা। বসানো হয়েছে বিশাল মঞ্চ। আলোকসজ্জায় সেজেছে পুরো উৎসবস্থল। মাঠের একপাশে রয়েছে পিঠার স্টল। পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে কেউ কুশলবিনিময়ে ব্যস্ত। একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন কেউ। কেউ খুলেছেন গল্পের ঝাঁপি। অনেকেই গল্প করছেন আর বিভিন্ন স্বাদের পিঠা খাচ্ছেন।
নতুন প্রবীন শিক্ষার্থীরা এই অনুষ্ঠানে এসে যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই ছোটবেলার সোনালি দিনগুলোতে। স্কুল প্রাঙ্গণের প্রাক্তনদের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসছিল, ‘বন্ধু, কী খবর বল, কত দিন পর দেখা’, ‘এই মাঠেই তো খেলে বেড়াতাম, আজ চেনাই যায় না’ তাঁরা বলছিলেন মনের গহিনে জমে থাকা নানা কথা। অনুষ্ঠানে সেনাকর্মকর্তা, আইনজীবীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত দুই হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র ও তাদের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন। তারা শৈশবের স্মৃতিচারণ আর দীর্ঘদিনের জমানো কথা বলে জমজমাট আড্ডায় মেতে ওঠেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ঝিনইদহ-৩ (মহেশপুর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সালাহ উদ্দিন মিয়াজী, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন, যশোর জিলা স্কুল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি ঢাকার সভাপতি এ এম জাকারিয়া মিলন, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন।
প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি এ জেড এম সালেকের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চৌধুরী। শোক প্রস্তাব করেন সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক এসএম তৌহিদুর রহমান।
সন্ধ্যা থেকে সাংস্কৃতিক পর্বে শুরু হয়। রাতে নৈশ ভোজের মাধ্যমে প্রথমদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শনিবার সকাল থেকে রাত অবধি শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ, আড্ডা, প্রাক্তন শিক্ষক সংবর্ধনা ও বর্তমান শিক্ষক পরিচিতি, বৃত্তিপ্রদান, পৃষ্ঠপোষক সম্মাননা, র‌্যাফেল ড্র, আতশবাজি ও সাংস্কৃতিক পবের্ বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইল্স সংগীত পরিবেশন করবে।