আটক সৎ মা নারগিসের বিরুদ্ধে মামলা, আদালতে স্বীকারোক্তি

‘সন্তান নিতে স্বামীর অনীহার ক্ষোভে গলাটিপে হত্যা জোনাকিকে’

এখন সময়: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল , ২০২৪, ১২:৫৬:১৫ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে শিশু খাদিজা খাতুন জোনাকিকে (৯) হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে তার সৎ মা নারগিস বেগম। নিজেকে সন্তান ধারণে তার পিতার অনিহা এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানদের বেশি ভালবাসার কারণে ক্ষোভের বসবতি হয়ে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে বলে নারগিস বেগম জানিয়েছেন। বুধবার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহম্মেদ।

আটক নারগিস বেগম যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ার নুর ইসলামের মেয়ে এবং বেনাপোল পোড়াবাড়ি এলাকার ইজিবাইক চালক শাহিন তরফদারের তৃতীয় স্ত্রী।

নারগিস বেগম জানিয়েছেন, প্রথমে তার এলাকায় একজনের সাথে বিয়ে হয়েছিল। সেখানে একটি ছেলের জন্মের পরে স্বামীর অত্যাচারে পিতার বাড়ি এসে অবস্থান করেন। ছেলেকে নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন পার করে নারগিস বেগম সৌদি আরবে চাকরি করতে চলে যান। এরই মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ছেলেকে নিয়ে যায় তার পিতা। ফিরে এসে কোনো কাজকর্ম না থাকায় জুটমিলে কাজ শুরু করেন। সেখান থেকে শাহিনের সাথে তার পরিচয় হয়। তবে নারগিসের কাছে নিজেকে অবিবাহিত বলেছিলেন শাহিন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে জানতে পারেন তার স্বামী শাহিন এর আগে আরো দুইটি বিয়ে করেছেন। শাহিনের দ্বিতীয় স্ত্রীর এক ছেলে ও তিন মেয়ে। তবে দাম্পত্য জীবনে দুইবার গর্ভবতী হয়েছেন নারগিস। কিন্তু শাহিন জোর করে ওষুধ সেবন করিয়ে সেই সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে। পাশাপাশি শাহিন অধিকাংশ সময় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানদের বেশি ভালবাসেন। এতে নারগিসে মনের ভিতরে রাগ বা ক্রোধের সৃষ্টি হয়। গত ২৬ মার্চ শাহিন বেনাপোলের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ছোট মেয়ে জোনাকিকে নিয়ে আসেন। জোনাকি মাঝেমধ্যে নারগিসের সাথে দুর্ব্যবহার করে। ঘটনারদিন ১ এপ্রিল সকালে শাহিন ইজিবাইক চালানোর জন্য বাসা থেকে বের হয়ে যান। নারগিসও কাজের জন্য বাসার বাইরে ছিলেন। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে নারগিস ফিরে এসে গোসল করার জন্য জোনাকিকে পুকুরে যেতে বলেন। কিন্তু জোনাকি তার পিতা বাসায় না এলে যাবেনা বলে জানায়। একটু জোর করে গোসলের কথা বলা হলে নারগিসকে মার দেয় জোনাকি। এ সময় গলা টিপে শ্বাসরোধে জোনাকিকে হত্যা করেন নারগিস। প্রথমে ঘরের দরজার আঁড়ালে লাশটি রেখেছিলেন নারগিস। এরই মধ্যে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে শাহিনকে মোবাইল ফোনে জানান নারগিস। শাহিন এসে খোঁজখবর নিতে থাকেন। কিন্তু সুযোগ বুঝে জোনাকির লাশ বাসার পাশে একটি পরিত্যক্ত ড্রেনের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। ওইদিন শাহিন কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে এলাকার সুমনের স্ত্রী ঝুমুর বেগমের পানি নিস্কাশনের ড্রেনের মধ্যে জোনাকির লাশ দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে সেখান থেকে মেয়ের লাশ করে শনাক্ত করেন শাহিন। পরে পুলিশ লাশটি ময়না তদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। কিন্তু সন্দেহের তালিকায় থাকা নারগিস বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এলেমেলো বক্তব্য দেন। পরে তাকে আটকের পর পুলিশের কাছে স্বীকার করেন যে জোনাকিকে নারগিস হত্যা করেছে।

এই ঘটনায় বুধবার কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন নিহত জোনাকির পিতা শাহিন তরফদার। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম নারগিসকে আদালতে সোপর্দ করেন। পরে তিনি জোনাকিকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এর আগে নারগিসের দেখানো মতে নিহত জোনাকির ব্যবহৃত জামা, স্যান্ডেল ও লাশ গুমের কাজে ব্যবহৃত বালতি উদ্ধার করে পুলিশ।