নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই অভ্যুত্থানে যশোরের জাবির ট্র্যাজেডিতে নিহত ২৪ জনের শহিদের স্বীকৃতি নিয়ে বিতর্ক নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। বুধবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে এই মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধন থেকে জাবির ট্র্যাজেডিতে শহীদদের নিয়ে বির্তক সৃষ্টি করতে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে (প্রথম আলো) সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদও জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাদের সন্তানের জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনে রাজপথে ছিলো। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিজয় মিছিলে যোগ দেয়। সেই মিছিল থেকে হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে আগুন লাগলে আটকে পড়াদের উদ্ধারে যায়। তারা কোন লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নয়। হোটেল জাবিরে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে একজন বিদেশি, ১৩ জন ছাত্রসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন। এক বছর পর এসে শহিদদের লুটপাটকারী ও সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা। সন্তানের স্বীকৃতি দাবি করেছেন তারা। একই সাথে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ‘গণমাধ্যমে মিথ্যাচারের’ প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
এ সময় নিহত আবরার নীলের মা জেসমিন আক্তার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নয় বছরের বাচ্চা কিভাবে দুর্বৃত্ত হলো? সে তো গিয়েছিল মানুষকে সাহায্য করতে। আগুন নেভাতে গিয়ে পুড়ে মারা গেছে। ও ছিল নিষ্পাপ শিশু। তাকে নিয়ে আর রাজনীতি করবেন না। তাকে লুটকারীর কলঙ্ক দেবেন না। এই প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শহীদদের স্মৃতিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা। গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বিতর্কিত করতে এবং আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘জাবির ট্র্যাজেডিতে একজন বিদেশী নাগরিক শহিদ হয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্র তাকে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ ছিল বিদেশী নাগরিক স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে। কিন্তু রাষ্ট্র সেটি করেনি। রাজপথে আন্দেলন সংগ্রামের সাথীরা জাবির ট্র্যাজেডিতে নিহত হয়েছে। তাদের স্বীকৃতি নিয়ে টালবাহানা দুঃখজনক।’
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শহীদ ইউসুফ আলীর মা শাহীনা খাতুন, শহীদ সোহানুর রহমান সোহানের বাবা আনোয়ার হোসেন লাল্টু। এসময় নিহতদের-আহত পরিবারের সদস্য ও জুলাই বিপ্লব আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও ডিসি অফিস চত্বরে প্রথম আলো ও যশোরের দৈনিক গ্রামের কাগজ পত্রিকায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, জাবির ট্র্যাজেডির ঘটনায় স্বত্বাধিকারী শাহীন চাকলাদারের ভাই তৌহিদ চাকলাদার বাদী হয়ে ওই বছরের আগস্ট মাসেই ২০০জন অজ্ঞাত আসামির নামে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। এই মামলাটি নিয়েও জুলাই যোদ্ধা ও নিহতের পরিবারের ক্ষোভ রয়েছে। ভবিষ্যতে মামলাটি উল্টো জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে পারেন বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।