কলারোয়া(সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কলারোয়ার কোঠাবাড়ি- রায়টা গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাঁশের সাঁকোটিতে টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বাঁশের ভাসমান সাঁকোয় চলছে নদী পারপার। কোঠাবাড়ির পাশের গ্রাম শুভঙ্করকাটি ও হেলাতলা অপর পাড়ে রায়টা ও আলাইপুর গ্রাম। বেত্রবতী নদীর তীরে এ গ্রামগুলোর অবস্থান। টেকসই সাঁকো না থাকায় কোমলমতি পড়ুয়াসহ বিপুল জনগোষ্ঠী নদী পারাপারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে যেয়ে এরূপ অবস্থা প্রত্যক্ষ করা গেছে। এ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, বেত্রবতীর ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা। কোঠাবাড়ি গ্রামের ঠিক বিপরীতে নদীতীরবর্তী কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের রায়টা গ্রাম। এই দুই গ্রামকে বিভক্ত করেছে বেত্রবতী। স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় সদ্য বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ অপ্রশস্ত ভাসমান সাঁকোটি দাঁড়িয়ে আছে ৬০টি প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর। ড্রামগুলো সুনিপুণভাবে বাঁশের খুঁটি ও পাটাতনের সাথে সংযুক্ত করে দিয়ে সাঁকোটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সাঁকোটির ওপর দিয়ে চলাচলের সময় সাঁকোটি দোল খায়। সেই সাথে দুলে দুলে সাঁকো পার হন মানুষ। কোঠাবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, সাঁকোটি এতটাই সংকীর্ণ যে একটি বাইসাইকেল সাথে করে নিয়ে পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গত বছর অক্টোবরে বেত্রবতী নদীর ওপর স্থাপন করা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যায়। এরপর ড্রাম দিয়ে ভেলা বানিয়ে তা দিয়ে মানুষ নদী পারাপার হতে থাকেন। পরবর্তীতে স্থানীয়দের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা ও হেলাতলায় ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনের সহায়তায় সম্ভব হয়েছে নদীটির ওপর ভাসমান বাঁশের একটি সাঁকো স্থাপন করা। ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তার ভাই ইমাম হোসেন আর্থিক সহায়তা করেন এই সাঁকো নির্মাণকাজ। তিনি বলেন, সাঁকোটি স্থাপিত হওয়ায় অন্ততপক্ষে দুপারের মানুষ হেঁটে নদী পারাপার হতে পারছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে। কথা হয়, এই সেতুর উপর দিয়ে পার হয়ে আসা রায়টা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী জুবায়ের, অসিউর, খাদিজা ও মরিয়মের সাথে। জুবায়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। অপর তিনজন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। এদের সকলের বাড়ি কোঠাবাড়ি গ্রামে। তারা জানায়, তারা প্রতিদিন দল বেঁধে এই সেতু দিয়ে স্কুলে যায় আবার ছুটির পরে বাড়ি ফিরে আসে। নদীর মাঝ বরাবর সেতু অনেক সময় দোল খায়। কোঠাবাড়ি গ্রামের লোকজন প্রতি শনি ও মঙ্গলবার রায়টা বাজারের সাপ্তাহিক হাটে যান। এছাড়া অন্যদিনও নানা প্রয়োজনে তাদের রায়টা বাজারে যেতে হয়। কোঠাবাড়ি গ্রামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় তাদের হেলাতলা অথবা রায়টায় যেতে হয়। সে কারণে কোটাবাড়ি-রায়টার সংযোগ সাঁকোটি তাদের নদী পারাপারে একমাত্র মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়ে আলাপকালে উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এখনো সেটির অনুমোদন পায়নি। একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা গেলে বেত্রবতীর দুই তীরের মানুষের বদলে যেতো জীবনযাত্রা। শুরু হতে পারতো এ জনপদের যোগাযোগের এক নবদিগন্তের। ড্রাম দিয়ে তৈরি করা ভাসমান বাঁশের সেতু দূর থেকে দেখলে মনোরম মনে হতেই পারে কিন্তু বাস্তবে এটি মোটেই টেকসই স্থায়ী ব্যবস্থা নয় -এমনটি মনে করেন এলাকার মানুষজন।