মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: মণিরামপুরে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র ২ পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও হামলার সময় বাধা দিলে হামলাকারীদের মারপিটে নারীসহ ৫ জন আহত হয়। এ সময় এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধারের পর মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করলেও কাউকে আটক করেনি। ফলে এ ঘটনায় পুলিশের ২ কনস্টেবলসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে যশোরের ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদি পক্ষর আইনজীবী অ্যাড. মকবুল ইসলাম।
এলাকাবাসী জানায়, মণিরামপুর পৌরসভার হাকোবা গ্রামের ব্যবসায়ী জয়দেব কুন্ডু পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া ১৩ শতক জমিতে গতবছর টিনসেড বাড়ি নির্মানের পর পরিবার নিয় বসবাস কর আসছে। কিন্তু ওই জমি নিয়ে প্রতিবেশী অপর ব্যবসায়ী প্রভাত কুন্ডুর সাথে জয়দেব কুন্ডুর বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এক অপরকে দোষারোপ করে আদালতে দুপক্ষেই মামলা করেন। এর মধ্য প্রভাত কুন্ডুর মামলাটি গত ২২ অক্টোবর আদালতে শুনানীর দিন ছিল। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এদিন সকাল সাতটার দিকে প্রভাত কুন্ডু ও তার ২ ভাতিজা পুলিশ কনস্টেবল মোহন কুন্ডু এবং রাজন কুন্ডুর নেতৃত্বে ধারালো দা, হকিষ্টিক ও লাঠিশোটা নিয়ে তার লোকজন প্রতিপক্ষ জয়দেব কুন্ডুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। অভিযোগ রয়েছে এ সময় বাঁধা দিলে তারা প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালিয়ে মারপিট করে। এতে জয়দেব কুন্ডু, শুক্লা রানী কুন্ডু, বন্যা রানী কুন্ডু, ইদ্রাজিৎ কুন্ডু ও উজ্জ্বল কুন্ডু আহত হয়। পর এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের মধ্য জয়দব কুন্ডুকে গুরুত্বর আবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকীদের স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। জয়দব কুন্ডুর ভাতিজা উজ্জ্বল কুন্ডু জানান, হামলার সময় ৯৯৯ নম্বর ফোন করা হলে থানা থেকে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ভাংচুরের ছবি মোবাইল ফোনে ধারন করে চলে যান।
কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পুলিশ।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে জয়দেব কুন্ডু বাদি হয়ে প্রভাত কুন্ডু ও তার ছেলে মাখন কুন্ডু, ভাতিজা পুলিশ কনেষ্টবল মোহন কুন্ডু ও রাজন কুন্ডুসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ২৩ অক্টোবর যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠাতে নির্দেশ দেন যশোর ডিবি পুলিশকে। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মকবুল ইসলাম। তবে প্রভাত কুন্ডু বিরোধীয় ওই জমি নিজের দাবি করে জানান, গতবছর জয়দেব কুন্ডু ওই জমি দখল করে সেখান টিনসেডের বাড়ি নির্মাণ করেন। ফলে ২২ অক্টোবর তিনি ও তার লোকজন যান জমি দখল করতে। তবে প্রভাত কুন্ডুর ভাতিজা পুলিশ কনেষ্টবল মোহন কুন্ডু ও রাজন কুন্ডু হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযাগ অস্বীকার করে জানান, তারা ২২ অক্টোবর মোহন কর্মস্থল সাতক্ষীরার সদর থানা এবং রাজন ঝিনাইদহে ছিলেন। অথচ মোহন এবং রাজনকে হকিষ্টিক নিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাঙচুর করতে দেখছেন ভুক্তভোগীসহ স্থানীয়রা। তাদের হামলার ভিডিও চিত্র ধারনও করেন স্থানীয় কয়েকজন তাদের মোবাইল ফোনে। এ ব্যাপারে মোহন কুন্ডুর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২২ অক্টোবর তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় কর্মরত ছিলেন। আর ভিডিও চিত্রর ব্যাপার তিনি জানান, এ ভিডিওটি গতবছরের ঘটনা। তবে উজ্জ্বল কুন্ডু, আবদুল হামিদ, রফিকুল ইসলাম, টিক্কা হাসেন, রহিমা খাতুনসহ অধিকাংশ প্রতিবশীরা জানান, ২২ অক্টোবর সকালে মোহন এবং রাজনক হকিষ্টিক নিয়ে তারা হামলা করতে দেখেছেন। এছাড়াও তাদেরকে ২১ অক্টোবর রাতে বাড়িতে কালীপূজা উদযাপন করতেও দেখেছেন তারা। মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাবলুর রহমান খান জানান, গত বহস্পতিবার আদালত থেকে বিরোধীয় ওই জমির উপর ১৪৪ ধারা জারীর নির্দেশনা এসেছে। দু-একের মধ্যে এটি কার্যকর করা হবে।