প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা : শখের বশে মরুর প্রাণী দুম্বা পালন শুরু করেছেন আশরাফুজ্জামান। খুলনার পাইকগাছার বান্দিকাটি গ্রামে তার বাড়িতে এ খামার। খামারের বয়স মাত্র ৫ মাস। ৪টি দুম্বা দিয়ে খামার শুরু করেছেন। খামার করার পর প্রথম একটি বাচ্চা হয়েছে, বাচ্চার বয়স দুই মাস। এতে এলাকায় রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
কোরবানির ঈদ এবং সারা বছরই দুম্বার মাংসের চাহিদা বেশি থাকে এবং এর দাম ছাগল-ভেড়ার মাংসের চেয়ে বেশি। তাই এটিকে সফল ব্যবসায় রূপ দিয়েছে।
বাংলাদেশে দুম্বা পালন একটি লাভজনক উদ্যোগ হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর মাংসের উচ্চ চাহিদা ও তুলনামূলক কম খরচে লালন পালন করা যায়। মরুভূমির প্রাণী হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া দুম্বা পালনের জন্য উপযুক্ত এবং বিভিন্ন উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সফল হয়েছেন। এই খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিরও সম্ভাবনা রয়েছে।
দুম্বার খামার মালিক পাইকগাছার বান্দিকাটির আশরাফুজ্জামান জানান, ইউটিউবে দুম্বা পালন দেখে শখের বশে তিনি দুম্বা পালনে উদ্বুদ্ধ হয়। ২০২৫ সালে কিশোরগজ্ঞের ভৈরব এগ্রো থেকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে ৪টি দুম্বা কিনে খামার শুরু করেন। খামারে দুম্বার প্রথম বাচ্চা হয়েছে। দুই মাসের বাচ্চাটি প্রায় ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হবে বলে জানান। এখন এটিকে সফল ব্যবসায় রূপ দিয়েছেন তিনি।
তার সাফল্যে অনুপ্রাণীত হয়ে আশপাশের অনেকেই দুম্বার খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন। বাড়ির উঠোনে টিনের ঘরে কাঠের খাঁচা তৈরি করে দুম্বা পালন করেন তিনি। তার খামারে মোট ৫ টি দুম্বা রযেছে। মরুর এই প্রাণি পালনে খুব একটা বেগ পেতে হয় না বলে জানিয়েছেন আশরাফুজ্জামান। ছাগল পালনের মতো দুইবেলা ঘাস আর দানাদার পশু খাদ্য এদের নিয়মিত খাবার। মাঝে মধ্যে মেজাজ বিগড়ে যায়, তাই মাদি দুম্বা থেকে আলাদা রাখা হয় পুরুষ দুম্বাকে। এই প্রাণি দলবদ্ধভাবে থাকতেই বেশি পছন্দ করে।
দুম্বাগুলোকে সপ্তাহে একদিন গোসল করানো হয়। রোগ-বালাইয়ের তেমন কোনো বিড়ম্বনা নেই দুম্বা পালনে। প্রাপ্তবয়স্ক মাদি দুম্বা ১৫ মাসের মধ্যে দুইবার একটি কিংবা দুটি ছানা প্রসব করে। প্রজননের জন্য একটি পুরুষ দুম্বা আছে।
দুম্বা পালনে বাণিজ্যিক সাফল্য অনুপ্রাণীত করছে প্রান্তিক পশু পালনকারীদের। দূর-দূরান্তের অনেকেই পাইকগাছার বান্দিকাটি আশরাফুজ্জামানের দুম্বার খামার দেখতে আসছেন। এই সাফল্যে অনেকেই দুম্বার খামার করার কথা ভাবছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ পার্থ প্রতিম রায় বলেন, লবনাক্ত উপকূল এলাকার পরিবেশে সহনশীল হওয়ায় দুম্বা পালন লাভজনক ব্যবসা হবে। দুম্বা মরুর প্রাণী হলেও প্রচলিত ছাগল ও ভেড়ার খাদ্য দুম্বা খেতে অভ্যস্ত। আশরাফুজ্জামানের দুম্বার খামার এখন প্রান্তিক প্রাণি পালনকারীদের কাছে মডেল। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা নিয়মিত আশরাফুজ্জামানের খামারের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।