বেনাপোল দিয়ে গাড়ির চেচিস ও মোটরপার্টস আমদানি কম

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ , ২০২৪, ০৭:৫৬:৩১ পিএম

আবদুল কাদের : বেনাপোল কাস্টমের রাজস্ব আহরণের সিংহভাগ আসে উচ্চ শুল্কযুক্ত গাড়ির চেচিস ও মোটরপার্টস আমদানি থেকে। কিন্তু করোনার কারণে গাড়ি ও মোটর পার্টসের চাহিদা কমে যাওয়ায় এর আমদানিও কমে গেছে। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ছন্দপতন ঘটেছে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে এক হাজার এক হাজার ৮৮৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। রাজস্ব  ঘাটতি হয়েছে এক হাজার ১০৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় রাজস্ব বেড়েছে ৩৪২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ১২ শতাংশ।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

বেনাপোল কাস্টম অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছরে বেনাপোল দিয়ে গাড়ির চেচিস আমদানি হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার ৯৩৬ টাকা মূল্যের ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৮ দশমিক ১০ পিস। আর মোটরপার্টস আমদানি হয়েছে ৮ কোটি ৪৩ লাখ ৭৮২ দশমিক ৯৭ কেজি। যার মূল্য ২১৯ কোটি ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৫ টাকা।

এর মধ্যে ২০১৬ সালে চেচিস আমদানি হয়েছে ৭৯ হাজার ৭১৪ পিস, মোটরপার্টস এক কোটি ৪১ লাখ ২৪৪ দশমিক ৯৪ কেজি, ২০১৭ সালে চেচিস আমদানি হয়েছে ৯১ হাজার ৪৮১ পিস, মোটরপার্টস এক কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩৬ দশমিক ৯৭ কেজি, ২০১৮ সালে চেচিস আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৭১ দশমিক ১ পিস, মোটরপার্টস হয়েছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার ৩২৩ দশমিক ৬৪ কেজি, ২০১৯ সালে গাড়ির চেচিস আমদানি হয়েছে ৫২ হাজার ৩২০ পিস মোটরপার্টস হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১০ দশমিক ২৬ কেজি, এবং গেল ২০২০ সালে চেচিস আমদানি হয়েছে ২৮ হাজার ২৪২ পিস, মোটরপার্টস আমদানি করা হয়েছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৭ দশমিক ১৬ কেজি।

২০১৩-১৪ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ২৪ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪২ দশমিক ৮৬ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৮৭৫ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৫ লাখ ১৯ হাজার ২২০ দশমিক ৮৪ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পন্য আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন পন্য।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, সেখানে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের উপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঘাটতি হয়েছে ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, গাড়ির চেচিস ও মোটরপার্টস আমদানি বেশি হলে রাজস্ব আহরণ বাড়ে। কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবে এটা স্বাভাবিক।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, করোনার কারণে গাড়ির ব্যবসা মন্দা থাকায় চেচিস আমদানি বেশি কমেছে। আর মোটরপার্টস আমদানিও এখন কমেছে।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, করোনার কারণে সব ব্যবসায় ধ্বস্্ নেমেছে। বেশি নেমেছে গাড়ির ব্যবসায়। কারণ মানুষের কাছে নগদ টাকার প্রবাহ বেশি থাকলে তখন তারা গাড়ি কিনতে ও পার্টসপাতি বদলাতে উৎসাহী হন। আবার বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাব এবং পণ্য চুরি হবার কারণে অনেকে বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, করোনার কারণে দেশের ব্যবসায় মন্দা থাকায় গাড়ির চেচিস ও মোটরপার্টস আমদানি কিছুটা কমেছে। তবে চলতি বছর আশা করছি আমদানি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমাদের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২২ দশমিক ১২ শতাংশ। বেনাপোল বন্দরের সক্ষমতার অভাবের কথা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমরা তাদেরকে বন্দরের পরিধি বাড়াতে চিঠি দিয়েছি।

বেনাপোল বন্দর উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব কার্যক্রম চালু হলে এ বন্দর দিয়ে আমদানির সঙ্গে রাজস্বও বাড়বে বলে জানান তিনি।