নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন রোজায় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজার দরের কারণে যেন তার বদনাম না হয়।
রোজা সামনে রেখে বুধবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভার পর বাণিজ্যমন্ত্রীর এই আহ্বান আসে।
তিনি বলেন, “আমি তো ব্যবসা থেকেই এসেছি, সবাই তো বলেন ব্যবসায়ী।… আমি যদি ভালো না করতে পারি, তাহলে আপনাদেরই বদনাম হবে। ব্যবসায়ী একজন লোককে মন্ত্রী বানানো হয়েছে, ব্যবসায়ীরাও মন্ত্রীর লোক, তাই না?”
মন্ত্রী হলেও এখনও নিজেকে ‘ব্যবসায়ীদের পক্ষে লোক’ হিসেবে বর্ণনা করে টিপু মুনশি বলেন, “এই ফিলিংসটা থাকা দরকার যে কমার্স মিনিস্টারকে ফেরত দেব না, উনার মুখের উপর যেন কালি না পড়ে, এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।”
মুসলমানদের সংযমের মাস রমজানে বেগুন, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ছোলা, তেল, মাংসসহ বেশ কিছু পণ্যের চোহিদা বেড়ে যায়। আর এ সময়টাই প্রতি বছরই এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক থেকে রাজনীতিতে আসা টিপু মুন্শিকে দেওয়া হয় বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব। আসন্ন রোজায় তাকে প্রথমবারের মত মন্ত্রী হিসেবে বাজার সামাল দেওয়ার পরীক্ষায় নামতে হবে।
ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টিপু মুনশি বলেন, “সারাজীবন টেবিলের ওপাশেই বসেছি, মন্ত্রী হয়ে এপাশে এসেছি। তবে আমার আচারণ ওপাশেই থাকবে। ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা দেব যতটা লজিক্যাল। মানুষের কষ্টের জায়গায়টায় আপনারা মানুষের কাছে থাকবেন।”
তিনি জানান, সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুদ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। যে মজুদ এখন আছে, তাতে রোজার মাসে ‘দাম বাড়ার কারণ নেই’ বলে ব্যবসায়ীরা তাকে আশ্বস্ত করেছেন।
“সেই দিক থেকে আমার মনে হয় সবাই যদি সততার সাথে করি এবং আমরাও ট্র্যাক রাখব, এটা যেন না বাড়ে, মেনটেইন করতে হবে…। রমজান মাস পবিত্র মাস, এই মানসিকতায় এ সময়ে সুযোগ নেওয়া ঠিক না, আল্লাহ তাদের উপর খুশি হবেন।”
পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির কারণেও বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে জানিয়ে এ বিষয়টিও ‘শক্তহাতে’ নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেন বাণিজ্য মন্ত্রী।
“ব্যবসায়ীদের কথায়, গ্যাসের সাপ্লাই বা চাঁদাবাজি এখন তাদের বড় মাথাব্যথা, আমরা শক্তহাতে হ্যান্ডেল করতে চাই চাঁদাবাজি। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই চাঁদাবাজি মানব না, আমরা সব জায়গায় পয়েণ্ট রাখব… চাঁদাবাজির জন্য যেন ভোগান্তি না হয়।”
চাঁদাবাজির কারণে কীভাবে পণ্যর দাম বাড়ে সেই উদাহরণ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রংপুরে যে সবজির দাম ১০ টাকা বা ১২ টাকা তা ঢাকায় ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় পথে পথে পরিবহনে চাঁদবাজির কারণে।
“পথে পথে চাঁদা দিতে হয়, শ্রমিকরা টাকা খায়, পুলিশরা টাকা খায়, ওমুক টাকা খায়, তমুক টাকা খায়, বাজার সমিতি টাকা খায়… এগুলো আমাদের শুনতে হয়।
“এক গাড়ি আনতে আনতে যে কত টাকা খরচ হয়, তার একটা হিসাব ধরিয়ে দেয়, ‘এত জায়গায় এত চাঁদা দিয়ে আসছি’। সেটা্ও তো প্রোডাক্টের ওপর গিয়ে পড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পজেটিভ আছে, আমরা এটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করব। থানা থেকে এসপি সেল করে দেব, যাতে কোনো জায়গা থেকে কল করলে ফেইস করা যায়।”
অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফা কামাল, টিসিবি চেয়ারম্যানব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. হাসান জাহাঙ্গীরসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।