নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা:ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট ও সম্ভবনা’ শীর্ষক আলোচনায় সাবেক মন্ত্রী নাসিম বলেন, “আমি মন্ত্রী ছিলাম জানি, যখনই কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম, তখন হাই কোর্ট ওই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে দিত।
“অনেক মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ভেজাল ওষুধের ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু উচ্চতর আদালতের নির্দেশে বন্ধের আদেশ স্থগিত হয়ে যায়। এতে অনিয়মকারীরা উৎসাহিত হয়। জনস্বার্থে বিষয়টিতে আদালতকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।”
বিএনপি এখন বাকশাল আতঙ্কে আছে বলেও মন্তব্য করেন নাসিম।
তিনি বলেন, “বাকশাল একটি দর্শন। সেই দর্শনের কথাই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন। কিন্তু বাকশাল পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা কেউ বলেনি। শেখ হাসিনা সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী করেছেন। বাকশাল প্রতিষ্ঠার কোনো বাস্তবতা এখন আর নেই। অথচ বিএনপি বাকশাল ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত আছে।”
নাসিম আরও বলেন, “উদার গণতন্ত্র এবং সুশাসন-অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ- দুটি এক সঙ্গে চাইলে হবে না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে কিছু ক্ষেত্রে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে।
“দেশে আমাদের চেয়ে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি আর কেউ করে না। ধর্মীয় অপপ্রচার বিএনপি-জামায়াত কয়েক যুগ ধরে করেছে। গণতন্ত্রের কথা তাদের মুখে শোভা পায় না। এতে মানুষ হাসে।”
অপপ্রচার না চালিয়ে সংসদে আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, “সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জামায়াতের চিন্তা পরিবর্তিত হয়নি। তারা আবার স্বরূপে ফিরে আসতে চাইছে। দুঃখের বিষয় তাদের সঙ্গে আপস করা হচ্ছে।
“জামায়াত আবার ফিরে আসতে চাইছে। শুধু তাই নয়, তাদের জায়গা দখল করেছে হেফাজত। শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে তারা প্রভাব বিস্তার করছে। ধর্মনিরপেক্ষতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে।”
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা গণতন্ত্রের মুখোশ পরা নব্য রাজাকার।”
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, “হেফাজতে ইসলামের কাছে সরকারের নতজানু আচরণ দুঃখজনক। পাঠ্যপুস্তকে তারা যেমন চাইছে সরকার তেমন পরিবর্তন আনছে। বিভিন্ন স্তরে হিজাব বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে, সামাজিক পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যাচ্ছে।
“আওয়ামী লীগের ভেতরে জামায়াত ঢুকে পড়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার সংকট রাষ্ট্র তৈরি করেছে। সংকট নিরসনে জনগণকে ভূমিকা রাখতে হবে।”
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি ফজলে হোসেন বাদশা।
আলোচনায় অংশ নেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ, গণতন্ত্রী
পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের এনামুল হক, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাসদের রেজাউর রশীদ খান।