স্পন্দন নিউজ ডেস্ক : বিমানের টিকেট কেটে যাত্রায় দেরি হওয়ার পাশাপাশি আরও নানা ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ তুলেছেন লন্ডন ফ্লাইটের এক দল যাত্রী।
গত ২৮ জুনের ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের এক যাত্রী বলেছেন, বিমানের চলাচল করে তার জীবনের দুটি দিন ‘নষ্ট’ হয়েছে, ভবিষ্যতে আর বিমানের টিকেট কেনার আগে ভাববেন তিনি।
যাত্রীদের অভিযোগ, ফ্লাইটে দেরি হওয়ার তথ্যটি বিমান কর্মকর্তারা তাদের জানাননি, দেরির সময় যাত্রীদের কোনো খবরও নেননি।
আবহাওয়ার কারণে ওই দিনের ফ্লাইটের দেরির বিষয়টি স্বীকার করলেও যাত্রীরা অন্য যে অভিযোগ করেছেন, তা নাকচ করেছেন বিমানের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাজ্যে বহু বাংলাদেশি থাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে যাত্রী অন্য ফ্লাইটের তুলনায় বেশি হয়।
গত ২৮ জুন লন্ডন ফ্লাইটটির সকাল ৯টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও তা ছয় ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।
ওই ফ্লাইটের একাধিক যাত্রী নিজেদের ভোগান্তির কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন।
সাহাদত হোসেন নামের এক যাত্রী তার ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ফেইসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “৬ ঘণ্টা বিমানের বিলম্ব, আর সময়মতো চেক ইন হওয়ায় ৮ ঘণ্টা বিমানবন্দরে কাটাতে হয়েছে। নোংরা টয়লেট, সীমিত খাবার আর সীমিত বিনোদনের ব্যবস্থা।”
গত কয়েক বছর ধরে বিমানে চলাচল করা হোসেন তার জীবনের ‘দুটি দিন নষ্ট’ হওয়ার কথা জানিয়ে ভবিষ্যতে আর কখনও বিমানে চড়বেন কি না, সেই প্রশ্নও রেখেছেন।
সিলেট থেকে ঢাকায় আসা ওই ফ্লাইটের আরেক যাত্রী সৈয়দ ফেরদৌস আলীকে তার বৃদ্ধ মা-বাবাকে হুইল চেয়ারে নিয়ে ছয় ঘণ্টা বোর্ডিং ব্রিজে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবা-মাকে এতটা সময় কেউ এক গ্লাস পানিও সাধেনি। আর নিরাপত্তার কারণে আমাদেরও বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না।”
লন্ডনগামী যাত্রীদের বোর্ডিং ব্রিজ পার হওয়ার সময় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
ফেরদৌস বলেন, “সেখানে বিমান কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত-অবিবেচক ও অমানবিক আচরণ করেছে। আমার পরিবারের আর কেউ আগামীতে বিমানে চলাচল করবে কি না, জানি না।”
বিমানে নিয়মিত যাতায়াত করেন, এমন একজন যাত্রী বলেন, “বিমানের আরেকটি বাজে দিক হল ফ্লাইট বিলম্ব হলে কিংবা ফ্লাইটে কোনো সমস্যা হলে সেই তথ্য তারা যাত্রীদের জানানোর প্রয়োজনই মনে করেন না।”
যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ২৮ জুন সিলেটের যাত্রীদের আনতে দেরি হওয়ায় ফ্লাইটটি দেরিতে ছেড়েছিল।
তিনি বলেন, “লন্ডনগামী ফ্লাইটের যাত্রীদের সিলেট থেকে আনতে ভোরে একটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট সিলেটের উদ্দেশে যাত্রা করে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেই ফ্লাইট সিলেটে নামতে না পেরে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ফেরত আসে।
“পরে সকাল ১১টার দিকে ওই ফ্লাইটটি আবারও সিলেট যাত্রা করে। দুপুর সাড়ে ৩টার পর সেটি ঢাকায় আসে। এরপর বিমানের ঢাকা থেকে লন্ডন ফ্লাইটের যাত্রীসহ তারা বিকালের পর লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করে।”
দেরির বিষয়টি অপেক্ষমান যাত্রীদের জানানো হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে সদুত্তর মেলেনি বিমান কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
তাহেরা খন্দকার বলেন, “ফ্লাইট বিলম্ব হওয়ার ঘটনাটি কেবল সিলেটে খারাপ আবহাওয়ার কারণে হয়েছে। ওই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সাথে যা যা করার, বিমান কর্তৃপক্ষ সেটা করেছে। এখানে কারও কোনো ধরনের গাফিলতি বা অবহেলা ছিল না।”
সেক্ষেত্রে যাত্রীরা অভিযোগ করছে কেন- প্রশ্ন করা হলে এই বিমান কর্মকর্তা বলেন, “এখানে যাত্রীদের একেক জনের একেক ধরনের প্রত্যাশা থাকতে পারে। তাই কারও কোনো অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু বিমান তার যা করণীয়, সেটা করেছে।”
বিমানের সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বহু দিনের।
বিমানে অব্যবস্থাপনা দূর করতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরতে গিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “একদিকে টিকেট পাওয়া যায় না, আরেক দিকে সিট খালি থেকে যায়। আমি ধরলাম। এখন আর সিট খালি থাকে না।”