কাল মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু

যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যস্ততা

এখন সময়: মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:২২:৫৭ পিএম

রিমন খাঁন: আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অধিক আগ্রহ। ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে  দলের মনোনয়নপত্র বিক্রি। এই কার্যক্রম চলবে ৮   সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।  এই অবস্থায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগে ব্যস্ত। কেউ কেউ ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সভানেত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সহসভাপতি আবদুল মজিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন, আবদুল খালেক, অ্যাড. মোহাম্মদ আলী রায়হান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলী রেজা রাজুর সহধর্মিণী দলের কার্যকরী সদস্য ফিরোজা রেজার নামটি দলীয় নেতাকর্মির মাঝে আলোচনায় রয়েছে। তবে তিনি জানিয়েছেন অনেকেই মনোনয়ন সংগ্রহের কথা বললেও এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করিনি। এ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন চলছে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য মেহেদী হাসান মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক উপশহর মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আবু সেলিম রানা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথকে ঘিরে। তবে মনোনয়ন কেনার পর বোঝা যাবে কে কে প্রার্থী হচ্ছেন?

দলের অন্যতম ত্যাগীনেতা বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান পিকুল বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন এবং জনসেবার ধারাকে অব্যাহত রাখার প্রত্যাশায় তিনি আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে জানান। তিনি বর্তমানে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন কদিন ধরে ঢাকায় বিভিন্ন নেতাদের সাথে দেখা সাক্ষাত রক্ষা করে চলেছেন বলে জানা গেছে। ছাত্রলীগ করে আসা এই নেতা ৬৮ সালে ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ছিলেন মণিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান এবং চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি। তিনি এখন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা পরিষদ  নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল মজিদ।  তিনি ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক। ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের  অন্যতম ছাত্রনেতা আব্দুল মজিদ। দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে তার যোগাযোগ একটু বেশি। যশোরের নেতাকর্মির মাঝে প্রভাব তেমন না থাকলেও কেন্দ্রে তার অবস্থান বেশ শক্ত। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী। ঢাকায় দলের শীর্ষনেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তিনি। আব্দুল মজিদ সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেক। সদ্য বিলুপ্ত জেলা পষিদের প্যানেল চেয়ারম্যান তিনি।  এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে মাঠে  নেমেছেন কোমর বেঁধে। কদিন ধরে অবস্থান নিয়েছে ঢাকায়। শীর্ষনেতাদের সাথে এখন যোগাযোগে ব্যস্ত । তবে তিনি বলেছেন নেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত হবে চূড়ান্ত।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন। তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রয়েছে তার বিশেষ খ্যাতি। তৎকালীন ছাত্রনেতা খয়রাত হোসেন এবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে নেমেছেন আর এক যুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনা এই তার ভাবনা। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হতে দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল। যশোর সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল একজন আইনজীবী হিসেবে  প্রতিষ্ঠিত। যে কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র থেকে প্রার্থীর সকল কাগজপত্র চূড়ান্ত করাই থাকে তার অলিখিত দায়িত্ব। বিভিন্ন ক্লাব বা ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন তিনি। এবার আওয়ামী লীগ থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রত্যাশী তিনি। তিনি জানান এখন যশোর আম্পায়ার্স নির্বাচন এর দায়িত্ব পালন করছি। ৪ সেপ্টেম্বরের আগেই ঢাকায় পৌঁছে যাব।

নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কার্যালয় খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ শেষে  চূড়ান্ত  ভোটার তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা অনুযায়ী এক হাজার ৩১৯ জন জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তাদের ভোটে একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ৮ জন সাধারণ সদস্য ও তিনজন সংরক্ষিত নারী নির্বাচিত হবেন।

এছাড়াও যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে ওয়ার্ডগুলোর নতুন সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন সীমানা অনুযায়ী এবার নির্বাচনে ৮টি ওয়ার্ড সদস্য ও ৩ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য নির্বাচিত হবে। সর্বশেষ নির্বাচনে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ৫ জন।

নতুন সীমানায় শার্শাকে এক নম্বর ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরে যথাক্রমে ঝিকরগাছা, চৌগাছা, অভয়নগর, বাঘারপাড়া, সদর, মণিরামপুর ও কেশবপুর। শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা নিয়ে এক নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড। দুই নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও যশোর সদর। মণিরামপুর ও কেশবপুর হচ্ছে তিন নম্বর ওয়ার্ডের ভিতর।

সকাল ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। এর আগে আগ্রহী প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।