বিতর্কিত প্রশ্ন প্রণয়নে তোলপাড়

যশোর শিক্ষাবোর্ডের তিন সদস্যের কমিটি গঠন

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:০৩:৫৬ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্নপত্রের প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী পাঁচ শিক্ষকই হচ্ছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের। মঙ্গলবার তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কলেজ পরিদর্শক কেএম গোলাম রব্বানিকে ও দুই সদস্য হলেন-শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপকলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র। এ ব্যাপারে বোর্ড সর্বোচ্চ কঠোর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে তিনি জানান।

যশোর বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রোববার এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ওই প্রশ্নের উদ্দীপক (সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ) হিসেবে এমন বিষয়কে বেছে নেয়া হয়েছে, যা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। এটি নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হচ্ছে- এতে সাম্প্রদায়িক উসকানি রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। মঙ্গলবার তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষক এবং পরিশোধনকারী চার শিক্ষককে শনাক্ত করে যশোর শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়েছে।

এরা হলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল এবং চার পরিশোধনকারী শিক্ষক হচ্ছেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।

যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব জানিয়েছেন, ওই প্রশ্ন প্রণয়নকারী এবং চারজন মডারেটর সবাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ঢাকা বোর্ড তাদের শনাক্ত করে যশোর বোর্ডকে জানিয়েছে। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দু রুদ্র জানান, এমন প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কিভাবে এই প্রশ্নপত্র হলো সেটি তদন্তের জন্য দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে  আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

রোববার উচ্চ মাধ্যমিকে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে একযোগে পরীক্ষা শুরু হয় এদিন। কিন্তু ঢাকা বোর্ডের ১১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নে সনাতন ধর্মের দুই ভাইয়ের জমি নিয়ে বিরোধের বিষয় তুলে ধরা হয়।

তাতে দেখানো হয়েছে, ছোট ভাই বিরোধের জেরে বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে একজন মুসলিম ব্যক্তির কাছে জমির একাংশ বিক্রি করে দেন। জমি কেনা ব্যক্তি সেই জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং কোরবানির ঈদে সেখানে গরু কোরবানি দেন। এতে জমি বিক্রেতা ভাইয়ের মন ভেঙে যায়, তিনি জমি-জমা সব ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যান।

বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষার পরই আলোচনা শুরু হয়। সরকার যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, এই প্রশ্ন তার সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, সেই প্রশ্ন ওঠে।

বিষয়টি ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করে শিক্ষামন্ত্রী সোমবার বলেন, কী কী বিষয় মাথায় রেখে প্রশ্ন করতে হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশিকা দেয়া থাকে শিক্ষকদের। সাম্প্রদায়িকতার কিছু যেন না থাকে, সেটাও সেই নির্দেশিকায় আছে।

এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মন্ত্রী।