ফেসবুকে সন্ধান

৪১ বছর পর পাকিস্তান থেকে বাড়ি ফিরলেন নিখোঁজ একলিমা

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:৩৭:২০ পিএম

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে নিখোঁজের ৪১ বছর বাড়ি ফিরেছেন একলিমা বেগম নামে এক নারী। ১৯৮১ সালে সন্তান রেখে নিখোঁজ হন তিনি। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তখন তার কোনো সন্ধান পায়নি। অবশেষে ফেসবুক তাকে সূদুর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে বাড়ি ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে। 
গত ১০ নভেম্বর দুপুরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের বাড়িতে ফেরেন একলিমা। এ সময় তার সঙ্গে আসেন পাকিস্তানে জন্ম নেয়া তার আরেক সন্তান। তার বাড়ি ফেরা নিয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 
এদিকে, একলিমার বাড়ি ফেরার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখতে হাজির হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে একলিমাকে শুভেচ্ছা জানান তারা। একলিমাকে পেয়ে খুশি পরিবারের সদস্যরা। 
৬৫ বছর বয়সী একলিমা বেগম বলেন, কিভাবে তিনি পাকিস্তান পৌঁছালেন সেটি তার মনে নেই। তবে পরিবারকে ফিরে পেয়ে খুশি তিনি। একলিমা বেগম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে থাকাকালে স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন একলিমা। এরপর একদিন সে অবস্থাতেই হারিয়ে যান। ফেসবুকের কল্যাণে দীর্ঘ ৪১ বছর পর গত পাঁচ মাস আগে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে খোঁজ মেলে তার। কিভাবে তিনি সেখানে পৌঁছালেন সেটি অবশ্য কেউই বলতে পারেননি। একলিমা এখন পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে থাকেন। সেখানে রয়েছে তার আরেক পরিবার। দ্বিতীয় সংসারে তিনি আরও দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। ওই পরিবারের কাছে একলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার নিজ মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরিবারের সদস্যরা তার সেই ভিডিও বার্তা ধারণ করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রæপে পোস্ট করেন। তাদের পোস্ট করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকির শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো নিজের দাদা-বাবা ও চাচাদের সাথে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। ভিডিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন যে, ভিডিওর একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে।
একলিমা বেগমের ছোট ভাই ইব্রাহিম শেখ জানান, সেসময় আমাদের অনেক অভাব ছিল। বোনের স্বামী মারা গেলে সে যেন প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিল। পরে কিভাবে যে সে পাকিস্তানে চলে গেল, তা আমরা কেউই জানি না।
একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকির শেখ বলেন, কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফু একলিমার খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হচ্ছিল। অবশেষে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দূতাবাসের সহযোগিতায় তাকে বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়েছে।
জাকির শেখ জানান, ফুফুর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি শুরুতে পাকিস্তানে একটি শেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। সেখানে তাদের পরিবারে দুটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়। দুই মেয়ে রমেছা বেগম ও নাছিমা বেগম। বড় মেয়ে রমেছা বেগম এখন পার্শ্ববর্তী হরিঢালী ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। ছোট মেয়ে নাছিমা বেগমের শ্বশুরবাড়িও একই গ্রামে।