মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

১৫ দিনের ছুটি নিয়ে দুই বছর পার চিকিৎসকের : ১৩ বছর অনুপস্থিত থেকেও বহাল রেডিওগ্রাফার

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:১০:০১ পিএম

আব্দুল মতিন, মণিরামপুর : কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির ১৩ বছর পার হলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন যশোরের মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফি) সন্দীপ কুমার দাঁ। অপরদিকে মাত্র ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর প্রায় ২ বছর পার হলেও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেরেননি সুমন কুমার নাম নামের এক চিকিৎসক। এদের মধ্যে রেডিও গ্রাফার ১৩ বছর ২ মাস আমেরিকায় এবং চিকিৎসক প্রায় দুই বছর যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। যে কারণে পদ শুন্য না হওয়ায় ওই পদে কাউকে নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে সেবা গ্রহণকারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে এই দু’জনের বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি সকল নিয়ম-কানুন প্রয়োগের পরও কাগজে-কলমে তারা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। প্রতিকারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র দিয়েও আজও কাজে আসেনি বলে জানাগেছে।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট  (রেডিওগ্রাফি) সন্দীপ কুমার দা ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ৩ মাসের বহির্গমনের ছুটি নেন। পরে জানা যায় তিনি ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি পেয়ে সপরিবারে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন। ছুটি শেষ হলে ওই পদ থেকে অবহ্যাতি চেয়ে একই সালের ২ ডিসেম্বর সন্দীপ কুমার দার বাবা নির্মল কুমার দা একটি আবেদন করেন। অব্যাহতিপত্র মোতাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্বরত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাগণ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পদ শুন্য ঘোষণা চেয়ে একাধিকবার আবেদন করেন। কিন্তু অদ্যাবধি তাতে সাড়া মেলেনি। যে কারণে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল্যবান এক্স-রে মেশিনটি এক পর্যায়ে বিকল হয়ে যায়। এতে স্বাস্থ্য সেবা থেকে আজও বঞ্চিত রয়েছে উপজেলাবাসি। সম্প্রতি নতুন আরও একটি এক্স-রে মেশিন কেনা হলেও পদ শুন্য না হওয়ায় নতুন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

অপরদিকে একই পথ অনুসরন করেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ডা. সুমন কুমার নাগ। তিনি ২০২০ সালের ১ নভেম্বর হতে ৩০ নভেম্বর অর্জিত ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ অফিসিয়ালি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তিনিও আজ অবধি আর কর্মক্ষেত্রে ফেরেননি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি। অথচ স্বাস্থ্য সেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ রেডিওগ্রাফি (এক্স-রে)। দীর্ঘকাল ভূক্তভোগীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর এই সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় কুমার বিশ^াস বলেন, তাদের দু’জনের ব্যাপারে তিনি শুধুই নন, তার পূর্বসুরিরাও ওই দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানালেও আজও কোনো সাড়া মেলেনি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ^াস জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। তারা ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু সকল নিয়ম অনুসরণের পর আজও কিছুই হয়নি।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অধিশাখা) মনোজ কুমার রায় জানান, এ ব্যপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।