শিরিশ গাছের ডালের আঠা সংগ্রহের হিড়িক

এখন সময়: বুধবার, ২৪ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:০৭:৫৫ এম

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা : ভালো দামের কারণে পাইকগাছায় শিরিষ গাছের ডালে লেগে থাকা আঠা জাতীয় প্রলেপ সংগ্রহের হিড়িক পড়েছে।  গত এক মাস ধরে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে ধুমসে এই প্রলেপ সংগ্রহের কাজ চলছে। অন্যসব কাজকর্ম ও নাওয়া খাওয়া ফেলে নারী-পুরুষ ও শিশু-বৃন্ধসহ বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ শিরিষ গাছের ডালে লেগে থাকা আঠা জাতীয় প্রলেপ সংগ্রহ করছে। আঠা লাগানো শিরিষের ডাল বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কিনছেন। 

তবে শিরিষ গাছের ডালের আঠা কোথায় যাচ্ছে, সেটা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনি।  লোক মুখে শোনা যাচ্ছে-ঢাকায় যাচ্ছে, আবার কেউ বলছে এটি ভারতে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু নিয়ে কী করা হচ্ছে, সেটিও সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছে না কেউ। আর কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে সংগ্রহকারী, ক্রেতা ও বিক্রেতার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তারা টাকা পাচ্ছে, তাই বিক্রি করছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় উপজেলার কপিলমুন ও শ্যামনগর বাজারে বিক্রি হচ্ছে শিরিষের আঠা। বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বিক্রেতা সাইদুল গাজী, রহমত আলী, ফরিজুল জানান, কপিলমুনি হাসপাতালের সামনে সন্ধ্যায় হাট বসে। বাইরের ব্যাপারীরা এসে সেগুলো কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন ভোর থেকে স্থানীয় ক্রেতারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে এগুলো কিনে নিচ্ছে। গাছ থেকে ডাল কেটে শ’শ’ ভ্যান ও ইজিবাইক বোঝাই করে বাড়ি নিয়ে আঠা ছাড়িয়ে বিক্রি করছে। এতে আয় হচ্ছে ভাল। শ’শ’ মানুষ বিকল্প আয় হিসেবে এই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।

জানা গেছে, নওগাঁ ও রাজশাহীতে গালা, পালিস, রং তৈরির কেমিক্যাল কারখানা রয়েছে। শিরিষের আঠা সেখানে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কপিলমুনি বাজারের ব্যবসায়ী নারান চন্দ্র সিংহ বলেন, শিরিষের আঠা রাজশাহী ও নওগাঁয় যাচ্ছে, সেখানে কারখানা আছে। মেশিনে রিফাইনিং করে মণ্ড তৈরি করা হয়। এ দিয়ে ফর্নিচারের পালিস করা গালা, সিল গালাসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য তৈরি করা হয়।

পাইকগাছার নতুন বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী সবুর হোসেন বলেন, আমি তিনটি শিরিষ গাছ কিনেছি ১৭০০ টাকায়। মেলেকপুরাইকাঠি গ্রামের মনিরুলের কাছে তিনটি গাছের আঠার প্রলেপ লাগা চিকন ডাল বিক্রি করেছি ২৫০০টাকায়। চিকন ডালগুলির ওজন এক মন হতে পারে। আঠা লাগা শিরিশের ডালের ব্যাপক চাহিদা। কে কার আগে ডাল কিনতে পারবে তার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ছুটে বেড়াছে।

ব্যবসায়ী সাইদুর জানান, গ্রামে গ্রামে গিয়ে গাছের ডাল কিনে গাছ থেকে সেগুলো নিজেরা ভেঙে নিয়ে আসছেন। সারাদিন ডাল কিনে সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে আঠা পরিষ্কার করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন। ডাল থেকে আঠার মত প্রলেপ ছাড়াতে কেজি প্রতি ৫০ টাকা দিতে হয়। এ আঠা সংগ্রহ করে বস্তায় ভরে হাটে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ডাল থেকে ছাড়ানো এ আঠা কেজি প্রতি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ হয়।

সাতক্ষীরার তালা থেকে পাইকগাছার কপিলমুনিতে আঠা কিনতে আসা আব্দুল হাই ও তার ছেলে ইমদাদুল বিশ্বাস বলেন, আমরা গাছের ডাল কিনছি। যে গাছের ডালে যেমন আঠা আছে, সে গাছ সেই রকম দামে কিনছি। ইতিমধ্যে ৩টি গাছের ডাল কিনেছি।  নিজেরা গাছে উঠে ডাল ভেঙে এনে আটি বেঁধে রাখছি। ভ্যানে করে বাড়ি নিয়ে যাবো। সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে ডাল থেকে আঠা ছাড়িয়ে বিক্রি করবো।

কয়েক বছর যাবৎ উপকূল এলাকার শিরিষ গাছের ডাল থেকে আঠা ঝরে যাচ্ছে ও ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে। কি কারণে আঠা ঝরে ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে তার রোগ উদ্ঘাটন হয়নি। আর আঠা ঝরে এক পর্যায় শতশত গাছ মরে মরে যাচ্ছে।

ভোর হলেই শ’শ’ মানুষ গ্রামে গ্রামে গিয়ে একপ্রকাল উৎসবমুখর পরিবেশে শিরিষ গাছের এই আঠা সংগ্রহের জন্য ডাল কিনছে। ছোট ছোট শিশু, বৃদ্ধ, নারী পুরুষ মিলে সামান্য পরিমাণ টাকার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাছে উঠে আঠা লাগানো চিকন ডাল কাটছে। বিশেষ করে মরা গাছে উঠে এই ডাল ও আঠা সংগ্রহ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে তারা শিরিষ গাছে চড়ে ডাল সংগ্রহ করছে।