যশোর মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দেহ দান লেখিকা জাহানারা মুক্তার

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:৩৮:২২ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর মেডিকেল কলেজে মরণোত্তর দেহ দান করলেন লেখিকা জাহানারা মুক্তা। যশোরের নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেফিটের মাধ্যমে তিনি তার দেহ দানের ঘোষণা দেন। নারী মুক্তি সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এই লেখিকা দীর্ঘ দিন মানুষের মুক্তির জন্যে বাম আন্দোলনের সাথে জড়িত। মণিরামপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ হয়েও এমন মহৎ কাজে নিজের দেহ দান করার ঘোষণা দেয়ায় যশোরের সুধি মহল তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ঘোষণা পত্রে নিজের পরিচয় হিসিবে তিনি উল্লেখ করেন তার পিতার নাম সাদেক আলী তরফদার, মাতা আমেনা বেগম এবং স্বামী মৃত শামসুল হক। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার পানিছত্র গ্রামের বাসিন্দা তিনি। ১৯৫৯ সালের ৬ মার্চে তার জন্ম, পেশায় কৃষিজীবী। ঘোষণাপত্রে নিজেকে রাজনীতিজ্ঞ ও সমাজসেবী হিসেবেও উল্লেখ করে তিনি চিকিৎসা সেবার উন্নতিতে নিজের দেহ মরণোত্তর দেয়ার কথা বলেন। তার মৃত্যুর পর দেহটি যশোর মেডিকেল কলেজ পাবে বলেও উল্লেখ করেন। চিকিৎসা সেবায় শিক্ষার্থীরা এই দেহ ব্যবহার করতে পারবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। তার ঘোষণাপত্রে যশোর মেডিকেল কলেজের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন অধ্যক্ষ ডা. মো. মহিদুর রহমান। ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেন অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু।

জানাগেছে, জাহানারা মুক্তা দীর্ঘদিন বাম রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন।  রাজনৈতিক কারণে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি সব সময় নারীদের আত্ম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন দেখেছেন শোষণ মুক্ত একটি সাম্য সমাজের। তার প্রকাশিত ৩টি গ্রন্থ রয়েছে। গ্রন্থগুলো হলো-নারী মুক্তির পাঠশালা, প্রয়াত নক্ষত্রের আলো(গল্প গ্রন্থ) ও সভ্যতার আত্মবিলাপ (শ্রমজীবী নারীদের উপরে লেখা)।

তার দেহদান সম্পর্কে অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন গৃহবধূ এত বড় সাহস ও ত্যাগ দেখিয়েছেন এটা সমাজের জন্যে দৃষ্টান্ত। তার অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়ে কেউ কেউ জীবন ফিরে পেতে পারে, মেডিকেল শিক্ষায়ও কাজে লাগবে এটা নিসন্দেহে একটি অনুপ্রেরণামূলক ঘটনা।

এদিকে মরণোত্তর এই দেহ দান করার ঘোষণা বিষয়ে রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক কম.ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, এমন ঘটনার জন্যে আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাই। তিনি নিসন্দেহে সমাজ ও দেশের জন্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এর আগেও অনেকে মরণোত্তর দেহ দানের ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু জাহানারা মুক্তা যে অঞ্চল থেকে উঠে এসে এমন ঘোষণা দিলেন তা তার সচেতনতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার দিককে স্পষ্ট করে। তিনি চিরকাল মানুষের মুক্তির জন্যে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।