দেবহাটার ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৮:১২:১৪ পিএম

দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ এর পোল্ডার-৩ এর আওতাধীন দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকায় বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইছামতি নদীর প্রবল জোয়ারে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই বেড়িবাাঁধের কিছু অংশ নদী গর্ভে ধ্বসে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বেড়িবাঁধে ক্রমশ ফাটলের পরিমাণ বাড়ছিল। বুধবার ভোরে আবারো ফাটলগুলো ভয়াবহ ভাঙনে রুপ নিতে দেখে এলাকাবাসি। ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের পাশর্^বর্তী বাড়িঘর জুড়ে এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে করে যেকোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরা।

এদিকে বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মুজিবর রহমান ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুলসহ পাউবোর কর্মকর্তারা সকালেই ঝুকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ইছামতি পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইতোপূর্বে পার্শ্ববর্তী সুশীলগাতি, কোমরপুর ও নাংলা সীমান্তে ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। প্রতিবার বেড়িবাঁধ ভাঙলে প্রায় মাসখানেক প্লাবিত এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যেমন ব্যহত হয়, ঠিক তেমনি গবাদী পশু পাখির ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর লোকসানের সম্মুখিন হয় ফসলী জমি ও মৎস ব্যবসায়ীদের। এভাবে যদি বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙতে থাকে তাহলে বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থরা ভাতশালার ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরিভাবে কংক্রিটের ব্লক, বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, বাঁধ ভাঙ্গার আগে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আর জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়না। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ ভেঙে গেলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় সেখানে কাজ শুরু করেন। আগে থেকে তারা কোন পদক্ষেপ নেন না। সাতক্ষীরা পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তার গাফিলাতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপকূলের অধিকাংশ এলাকার বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা খুব নাজুক। ফলে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই সামান্য জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল বলেন, ভাতশালা এলাকায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধ ভাঙনের ভয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসি অন্যত্র অবস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেড়িবাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলাতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় পাউবোর বেড়িবাঁধ সংষ্কারে কোন বরাদ্দ হলে সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসারদের (এসও) সাথে ঠিকাদাররা যোগসাজসে দায়সারা গোছের কাজ করে চলে যান। কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে সংষ্কার কাজ কিনে নিয়ে পাউবোর এসওরা নিজে তা লেবার সর্র্দারের কাছে ফের বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ পকেটস্থ করেন। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন তদারকি থাকে না। ফলে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা লোপাট হয়ে যায়। কাজ হয় যৎসামান্য। উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সঠিক ভাবে করতে তিনি এসব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মুজিবর রহমান বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও কংক্রিটের ব্লক ডাম্পিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডর সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার (এসও) সাইদুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত ভেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গনের মাত্রা তীব্র হওয়ায় কেবলমাত্র কংক্রিটের ব্লক এবং বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে তা রোধ করা কষ্টের ব্যাপার। মুলত ভাঙ্গন কবলিত ওই এলাকাটিতে নতুন করে রিং বাঁধ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয়রা রিং বাঁধ নির্মানের পক্ষে মত দিচ্ছেন না। তবুও শীঘ্রই বালুর ব্যাগ ও ব্লক ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।