প্রেমের টানে আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার কেশবপুরে ১২ বছর!

সিরাজুল ইসলাম, কেশবপুর : কেশবপুরের রহিমার প্রেমের টানে আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস হোগল এখন মেহেরপুরে ১২ বছর ধরে সংসার করছে।

কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের রহিমা খাতুনের ভালোবাসার কারণে নিভৃত পল্লীতে এসে সংসার পেতেছেন আমেরিকান নাগরিক ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস হোগল। গত প্রায় ১২ বছর ধরে তিনি বসবাস করছেন এ গ্রামে। রহিমার সাথে সংসারও সাজিয়েছেন সুন্দর করে। করছেন কৃষিকাজ। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির সঙ্গে। রহিমা খাতুনের সঙ্গে বাকি জীবনের শেষ পর্যন্ত থাকতে চান। আমেরিকা থেকে মা ও প্রথম পক্ষের স্ত্রী সন্তানকেও নিয়ে আসতে চান তা এ বাড়িতে। ক্রিস হোগলের বর্তমান নাম মো. আয়ূব হোসেন। বয়স প্রায় ৫৬ বছর। প্রায় এক যুগ ধরে রহিমা খাতুনের সঙ্গে তিনি সংসার করছেন।

মেহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাদ আলী মোড়ল জানান, বিদেশি মানুষটি এখানে বিয়ে করে অনেক দিন ধরে বসবাস করছেন। প্রায় ১০-১২ বিঘা ফসলি জমি ক্রয় করেছেন। তিনি ধান চাষ করেন। নিজে ক্ষেত থেকে ধান এনে ভ্যানে উঠিয়ে বাড়িতে নেন। এলাকার মানুষ তার বাঙালি হয়ে ওঠার দৃশ্য প্রতিদিন অবলোকন করেন। বিস্মিত হন ভালোবাসা মানুষকে কীভাবে পরিবর্তন করতে পারে ভেবে।

আয়ূব হোসেনের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি প্রথমে সালাম দেন। এরপর তিনি জানান, তার মূল নাম ক্রিস হোগল। তিনি আরো জানান, তার বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। পেশায় তিনি পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার। রহিমা খাতুনের সঙ্গে ভারতের মুম্বাই শহরে তার প্রথম পরিচয় সূত্রে তার প্রথম ভালো লাগা। সেই থেকে প্রেম।

ভারতের মুম্বায় শহরে তিনি অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। মুম্বাই শহরে ঘটনাক্রমে রহিমার সঙ্গে তার দেখা হয়। এরপর তাদের সম্পর্ক ভালোবাসায় রূপ নেয় এবং এখন তারা সুখী দাম্পত্যজীবনে।

রহিমা খাতুন দৈনিক স্পন্দনকে বলেন, শৈশবে তার বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুন নেছার হাত ধরে অভাবের তাড়নায় পাড়ি জমান ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন।

বাবা শ্রম বিক্রি করতেন। আর রহিমা সেই শৈশবে বারাসাতের বস্তিতে একা থাকতেন। ১৩-১৪ বছর বয়সে বাবা তাকে বিয়ে দেন। তারা জমি কিনেন। এর মধ্যে রহিমা খাতুন তখন তিন সন্তানের জননী। কিন্তু অভাবের তাড়নায় তার স্বামী সেখানকার জমি বিক্রি করে দেন। রহিমা খাতুনকে একা ফেলে তার স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যান। রহিমা খাতুন চলে যান জীবিকার সন্ধানে মুম্বাই শহরে। বর্তমান প্রেমের টানে আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার ক্রিস হোগলকে নিয়েই তার নতুন সংসারের ১২ বছর অতিবাহিত করছে। শ্যামল বর্ণের রহিমা খাতুন ও শ্বেতাঙ্গ আইয়ুব হোসেনকে নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের পথ চলা।