ভারতীয় নকল পেঁয়াজ বীজে কপাল পুড়লো৭ গ্রামের দুই শতাধিক কৃষকের

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:০৫:১৮ পিএম

শাহীন আলম তুহিন, মাগুরা : মাগুরায় ভারতীয় নকল পেঁয়াজের বীজ রোপন করে বিপাকে পড়েছেন শ্রীপুর উপজেলার ৭ গ্রামের প্রায় ২শ’ শতাধিক কৃষক। চলতি মৌসুমে এ কৃষকরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ ক্রয় করে তা রোপন করেন। রোপনের পর পরই সেচ দেওয়ার সাথে সাথে পেঁয়াজের ছোট ছোট চারাগুলো মরে যায় ফলে বিপাকে পড়েন কৃষকরা। মাগুরা জেলার মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মসলাজাতীয় ফসল পেঁয়াজের আবাদ হয়। কিন্তু  চলতি মৌসুমে শ্রীপুর উপজেলার ৭ গ্রাম জোকা, হোগলডাঙ্গা, আমলসার, চরমালাইনগর, মদনপুর, বড় উদাস ও গোয়ালপাড়া গ্রামে পেঁয়াজ আবাদে ধস নেমে বেশি। এ বিষয়ে পেঁয়াজের বীজ ব্যবসায়ী শ্রীপুরের চর জোকা গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন নকল বীজ বিক্রয়ের দায়ে মহম্মদপুরের শ্যামনগর গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী আনোয়ার মৃধার নামে মোকাম মাগুরার শ্রীপুর আমলী আদালতে গত ৩০ জানুয়ারি একটি মামলা করেন। মাগুরার শ্রীপুরের এ ৭ গ্রামে রোববার সরজমিন  মাঠ ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজের অধিকাংশ মাঠগুলোতে কোন চারা গজাইনি। মাঠে কিছু অংশে আছে পেঁয়াজের চারা আবার কোন অংশে নেই। আবার যে অংশে চারা রয়েছে সেখানে চারাগুলো মরে হলুদ হয়ে গেছে। বিবর্ণ মাঠে বসে কৃষকরা শুধু করছে হাহাকার।

শ্রীপুরের গোয়ালপাড়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি অলিয়ার বিশাস বলেন, গত বছর আমার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তা দেখে এবারও পেঁয়াজের আবাদ করি। এবার আমি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা এলাকা থেকে ৪ হাজার ৬ শ টাকার  ভারভীয় বীজ ক্রয় করি। গত মাঘ মাসে আমি বীজ পাতো দিই। তারপর মাঠে রোপন করি পৌষের মাঝামাঝি পেঁয়াজের চারা রোপন করি। কিন্তু সেচ দেয়ার পর পরই আমার পেঁয়াজের চারা গুলো বসে যায়। ৫৫ শতকের ক্ষেতে অধিকাংশ জমিতেই কোন চারা না গজানোর ফলে আমি বিপাকে আছি। এ বছর আমার ২ লক্ষ টাকার পেঁয়াজে ক্ষতি হলো। গত বছর পেঁয়াজে সব খরচ বাদে আমার ২-৩ লক্ষ টাকা লাভ ছিল। এবার সর্বশান্ত হয়ে গেছি এ চাষে।

শ্রীপুর জোকা গ্রামের রহমান বিশ্বাস চাষি বলেন, এবার ১৩০ শতকে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেয়াঁজের বীজাটা ছিল ভারতীয়। ফলে পেঁয়াজ লাগানোর পর একটি দিই জমিতে। সেচ দেয়ার পরই আর কোন চারা গজাইনি জমিতে ফলে পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে আছি।

শ্রীপুরের  হোগলডাঙ্গা গ্রামের চাষি ওবাইদুর জানান,আমি বরাবরই পেঁয়াজের চাষ করি। কিন্তু এবার ভারতীয় বীজে পেঁয়াজের চাষ করে সর্বশান্ত হয়েছি। আমাদেও গ্রামের অনেক কৃষকই এবার ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ ক্রয় কওে পেঁয়াজের চাষ করে মাঠে চারা রোপনের সাথে সাথেই হলুদ হয়ে মারা যাচ্ছে। ফলে এ চাষে আমাদের  মাথায় হাত।

শ্রীপুরের চরজোকা গ্রামের ভুক্তভোগী একাধিক পেঁয়াজচাষি আজাদ, রফিক, নজরুল, আতিয়ারসহ আরো অনেকে জানান, আমাদের গ্রামের বীজ ব্যবসায়ী আলাউদিনের কাছ থেকে আমরা এবার পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করি। বীজটি পাতো দেওয়ার পর চারা হয়। সেই গুলো আমরা মাঠে রোপন করি। তারপর সেচ দেয়ার পরপরই মরে যায় পেঁয়াজের চারা। আমরা সবাই বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের উপর চার দেয়। পরে সে কোর্টে মামলা করে।

বীজ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, আমি সততার সাথে বীজের ব্যবসা করে আসছি দীর্ঘদিন। এবার চলতি মৌসুমে মাগুরা মহম্মদপুরের শ্যামনগর থেকে বীজ ব্যবসায়ী আনোয়ার মৃধার নিকট থেকে ৫২ কেজি বীজ  ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় ক্রয় করি এবং এলাকার বিভিন্ন কৃষকের কাছে বিক্রয় করি। পেঁয়াজের বীজে ধস নামার সাথে এলাকার কৃষকের চাপে পড়ি। ফলে আমি মহম্মপুদপরের ঐ বীজ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গত ৩০ জানুয়ারি একটি মামলা করি। যেটি এখন শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে ভালো ফলাফল পাব আশাকরছি।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালমা জাহান নিপা বলেন,মাগুরা জেলার মধ্যে শ্রীপুরে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। চলতি মৌসুসে এবার উপজেলায় ৫ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। কিন্তু এবার উপজেলার কিছু গ্রামের পেঁয়াজের রোপনের পর পরই ক্ষতি হয়েছে শুনেছি। এটা বীজের সমস্যা নাকি অন্য সমস্যা আমরা তদন্ত করছি। এ বিষয়ে উপজেলার চরজোকা গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন কোর্টে একটি মামলা করেছে। সেটির তদন্ত আমাদেও উপর রয়েছে। আমরা নকল বীজ ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পাশাপশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।