রমজানে ‘মানবকল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’

বেশি দামে পণ্য কিনে কম দামে বিক্রি করছে আইডিয়ার ‘লসের বাজার’

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:১৭:১১ এম

মিরাজুল কবীর টিটো: স্বামীর ভ্যান চালানো আয়ের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। রোজার মাসে সংসার চালাবো কীভাবে তাই ভেবে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ‘লসের বাজার সেই চিন্তা থেকে মুক্তি দিল। আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার লসের বাজার থেকে কেনাকাটার পর এমনটাই বলছিলেন খড়কির পীড়বাড়ি এলাকার ফাতেমা বেগম (২৫) নামে এক নারী। যশোরে লসে পণ্য বিক্রির জন্য যশোরে ভিন্নধর্মী ৯টি বাজার বসিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কম দামে সেখানে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

আবু হাসান নামে আরেক ক্রেতা জানান, ৫৫০ টাকায় ৯টি পণ্য কিনে ভীষণ খুশি তিনি। রোজার মাসের বাজার কীভাবে করবো এই চিন্তায় নাভিশ্বাস উঠছিলো। অবিশ্বাস্যভাবে এই বাজার থেকে অর্ধেক দামে পণ্য কেনার  সুযোগ পেয়ে সত্যিই আনন্দিত। এটুকু নিশ্চিত যে এইমাস খাওয়ার চিন্তা থাকলো না। একই কথা জানান দীপা, নুর জাহানসহ আরো অনেক ক্রেতা।

রমজানে মাসব্যাপী লস করার উদ্দেশ্য নিয়ে ৯টি বাজারে বতর্মান বাজার দরের চেয়ে অর্ধেক দামে ৫০০ মধ্যবিত্ত পরিবারের নিকট বিক্রি করবে আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবীরা। ‘মানবকল্যাণে আমরা ঠকতে চাই কিংবা ‘ইহলৌকিক লস,পারলৌকিক লাভ শ্লোগানে বৃহস্পতিবার রমজান উপলক্ষে প্রথম বসে। এদিন ৫৩৭ টি মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে অর্ধেক দামে ৯ টি পণ্য বিক্রি করা হয়। একজন ক্রেতা ৫৪ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় ৫ কেজি। ২৫ টাকা কেজি দরের আলু ১০ টাকা করে ২ কেজি। ১৪০ টাকা কেজি দরের ডাল ৪০ টাকায় ১ কেজি। ১২০ টাকা দরের চিনি ৪৫ টাকায় ১ কেজি। এছাড়া ১৯০ টাকা লিটারের তেল ১২০ টাকায়, ৪৫ টাকা দরের পেঁয়াজ ২০ টাকায়, ৯৫ টাকা দরের ছোলা ৬০ টাকায়, ৬০ টাকা দরের চিড়া ২০ টাকায়, ৩২০ টাকা দরের খেজুর ১০০ টাকায় লসের বাজার থেকে কেনা যাবে। একটি পরিবার সপ্তাহে একবার করে মোট চারবার লসের বাজার থেকে কেনাকাটার সুযোগ পাবেন।

বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই ৯ টি পণ্য কিনতে ১২৮৭ টাকার দরকার হয়। কিন্তু আইডিয়ার লস প্রজেক্টের  এই বাজার থেকে ৫৫০ টাকায় পণ্যগুলো কেনা যাচ্ছে।

আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক বলেন মধ্যবিত্ত দান চায় না, ত্রাণ চায় না, চায় পরিত্রাণ। আমাদের সাধ্যের মধ্যে আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমরা কিছু মানুষ যোগ হলেই সম্ভব বহু মানুষের পরিত্রাণেরব্যবস্থা করা। আমার শিক্ষার্থীদের শেখাতে চাচ্ছি সব লস আসলে লস নয়, মানব সেবায় লস বরং লাভ এর ই নামান্তর। গতবছর লস প্রজেক্টর মাধ্যমে সেই তৃপ্তির স্বাদ আমার শিক্ষার্থীরা পেয়েছে। এ বছরও তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

আইডিয়া লস প্রজেক্টর সমন্বয়ক হারুন অর রশিদ জানান, আইডিয়ার স্বেচ্ছাসেবকরা মাসব্যাপী যশোরের ৫ নম্বর ওয়ার্ড জরিপ করে মধ্যবিত্ত ৫৩৭ টি পরিবারকে এই প্রজেক্টের আওতায় নিয়ে আসে।