স্কুলছাত্রী অনি’র লাশ নিয়ে ঝিকরগাছা উত্তাল, মহাসড়ক অবরোধ

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ , ২০২৪, ০২:৩৮:১২ পিএম

 

এম আলমগীর ও আবু সাঈদ মিলন, ঝিকরগাছা : বখাটেদের উত্ত্যক্তের জেরে যশোরের ঝিকরগাছায় স্কুলছাত্রী অনি রায় (১৩) আত্মহত্যার ঘটনায় লাশ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধে উত্তাল হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল থেকে লাশ আনার পরে দুপুর আড়াইটার দিকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় অনি রায়ের লাশ নিয়ে হাসপাতাল মোড় থেকে উপজেলা মোড় পর্যন্ত মিছিল নিয়ে যায় এলাকাবাসী। অনি রায়কে উত্ত্যক্তকারী বখাটেদের বিচার দাবি করা হয়। পরে উপজেলা মোড়ে মহাসড়ক বন্ধ করে দিয়ে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান নেয়। এ সময় তারা উত্ত্যক্তকারী সাকিব ও বিএম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের নামে স্লোগান দেয়। অবরোধের ফলে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত এসে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে অবরোধকারীরা সড়ক ছেড়ে দেয়।

এদিকে মেধাবী শিক্ষার্থী অনি রায়ের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নেন যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মনিরুল ইসলাম মনির। এ সময় তিনি অনি রায়ের মা-বাবাসহ নিকট আত্মীয়দের সান্ত¡না দেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি ধৈর্য্যরে সাথে মোকাবেলা করার আহবান জানান।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্কুলের কোচিং থেকে ফিরে ঝিকরগাছা বি.এম হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অনি রায় (১৩) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। নিহতের পরিবারের দাবি, ইভটিজিং এর শিকার হয়ে অনি আত্মহত্যা করেছে। সে পৌর সদরের মিস্ত্রীপাড়া এলাকার প্রবাসী গৌতম রায়ের মেয়ে।

নিহতের ভাই অর্ঘ্য রায় জানান, প্রতিদিনের মত তার বোন স্কুলে কোচিং এর জন্য যায়। কোচিং থেকে ফিরে কাউকে কিছু না বলে নিজের ঘরে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে ঘরের দরজা ও ভেন্টিলেটর ভেঙে তাকে উদ্ধার করা হয়।

অর্ঘ্য রায় আরো জানান, তার বোন স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছু তিন বখাটে তাকে উত্ত্যক্ত করে। এরপর তার বোন বাড়িতে এসে আত্মহত্যা করে। ওই তিন যুবকের মধ্যে একজন হাসপাতাল রোড এলাকার সাকিব। সে বি.এম হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। পরে স্কুলের গেটের একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ওই তিন যুবক স্কুলে ঢোকার দশ মিনিট পরে নিহত অনি রায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বের হচ্ছে। অন্য একটি ফুটেজে দেখা যায় অনি রায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী উর্মি নামের এক মেয়ে জানান, নিহত অনি অনেক জোরে জোরে দৌঁড়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। আর তিনটা ছেলে তার পিছু নিয়েছিল।

এদিকে অনি রায়ের মৃত্যুর পরে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের অবস্থান সন্দেহজনক বলে দাবি করছে পরিবারের সদস্যরা। নিহতের কাকি কৃষ্ণা দে জানান, অনির মৃত্যুর পরে প্রধান শিক্ষক তার সহপাঠীদের এখানে আসতে নিষেধ করেছে। এমনকি তাদের অভিভাবকের কাছে ফোন দিয়ে তাদের মেয়েদের এই ব্যাপারে কথা বলতে নিষেধ করেছে।

ঝিকরগাছা বি.এম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, অনি রায় খুবই ভাল মেয়ে। খেলাধুলার কারণে পরিচিত মুখ ছিল।  কোচিং থেকে বাসায় ফিরে সে আত্মহত্যা করে। সিসিটিভি ফুটেজের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের এক্সপার্ট ছিল না। সেজন্য ফুটেজ দিতে দেরি হয়েছে। অনি রায়ের আত্মহত্যার জন্য দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার স্কুল কর্তৃপক্ষ মানবববন্ধন করবে।

ঝিকরগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।