নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৪টি গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ১ লাখ ১৯ হাজার ১১২টি এবং ছাগলের চামড়া ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮২টি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৪টি গরু, মহিষ ও ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ১ লাখ ১৯ হাজার ১১২টি এবং ছাগলের চামড়া ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮২টি। বিভাগটির জেলাগুলোর মধ্যে খুলনায় ২২ হাজার ৭৪২টি, যশোরে ৭৫ হাজার ১৮৫, চুয়াডাঙ্গায় ৬ হাজার ৭২, বাগেরহাটে ১৩ হাজার ৫৭, নড়াইলে ৩০ হাজার ৭১৫, মাগুরায় ৭ হাজার ১৫২, মেহেরপুরে ১৮ হাজার ৮৫, ঝিনাইদহে ৯৩ হাজার ৭৩৬, কুষ্টিয়ায় ৩৬ হাজার ৭৩৭ এবং সাতক্ষীরায় ২৩ হাজার ৩১৩টি চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে।
সিন্ডিকেটের কবলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার মোকাম রাজারহাটের চামড়া ব্যবসা। দাম বৃদ্ধি করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণের ঘোষণার ফাঁদে পড়ে পুঁজি হারাতে বসেছেন ক্ষুদ্র ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সরকারের মূল্য নির্ধারণে মাঠ পর্যায়ে তারা বাড়তি দামে চামড়া কিনেছেন। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়তি মূল্য দিচ্ছেন না।
মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ৪শ’ থেকে ৬শ’ এবং বড় চামড়া সর্বোচ্চ ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের চামড়া দাম প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা। অথচ মাঠ পর্যায় থেকে তারা এর কমপক্ষে দেড়গুন ব্যয় করে চামড়া হাটে নিয়ে এসেছেন। তাদের দাবি, সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোলা দিঘলিয়া গ্রাম থেকে ১শ’ পিস গরুর চামড়া নিয়ে হাটে এসেছিলেন অলোক বিশ্বাস। তিনি জানালেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া
সংগ্রহ করা, লবণ লাগানো এবং পরিবহন খরচ মিলিয়ে চামড়ার দাম প্রতি পিস পড়েছে ৮শ’-৯শ’ টাকা। সেই চামড়া ৭শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকার বেশি দাম উঠছে না। প্রতিপিস চামড়ায় গড়ে দু’শ টাকা লোকসান।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহসভাপতি সাঈদ আহমেদ নাসির শেফার্ড বলেন, মঙ্গলবার প্রথম ও ছোট হাট হওয়ায় এদিন ছয় হাজারের মতো গরুর চামড়া উঠেছিল। তবে বাজার বেশ নিম্নমুখি। বেশির ভাগই চামড়াই ৫শ’ থেকে ৮শ’ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। এতে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। মূলত সরকার নির্ধারিত দামের সাথে বাজারের সামঞ্জস্যতা নেই বলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামীকাল শনিবারের হাটের দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন। এদিন প্রচুর চামড়া আমদানি যেমন হবে, তেমনি ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ী-আড়তদাররা আসবেন; আবার ট্যানারির লোকজনও আসবেন। কেনা-বেচার প্রতিযোগিতা বাড়লে দাম ঊর্ধ্বমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বড় ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট। ঢাকার পরে দেশের অন্যতম বৃহত্তর চামড়ার
মোকাম এটি। এই মোকামে তিন শতাধিক আড়ৎ রয়েছে। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। এখানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা ছাড়াও ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নাটোর এবং ঢাকার বড় বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন।
এই হাট ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার ছোট বড় ব্যবসায়ী ব্যবসা করেন। প্রতিবছর কোরবানির ঈদ ঘিরে কয়েকটি হাটবারে রাজারহাটে প্রায় শত কোটি
টাকার চামড়া বেচাকেনা হয়ে থাকে।
গত ৯ জুন দুপুরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চামড়ার হাট রাজারহাট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চামড়া শিল্পে সবার আগে এতিমখানা, মাদ্রাসার স্বার্থ রক্ষার কাজ করছি। আমরা কাজ করছি, দেশের চামড়া শিল্পের স্বার্থ, দেশের চামড়া শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে। চামড়া শিল্পের যে অধঃপতন ঘটেছে গত ১৫ বছরে, নৈরাজ্য সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া জন্য সারাদেশে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি, এছাড়া কন্ট্রোল টিমও কাজ করছে।’ শেখ বশিরউদ্দীন বলেন বলেন, চামড়া শিল্প রক্ষার্থে অন্তর্বর্তী সরকার যত কর্মকান্ড করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন সরকার তা করেনি। চামড়ার মূল্য সঠিক ও বৃদ্ধি করার লক্ষে সাড়ে সাত লাখ টন লবণ বিতরণ করা হয়েছে। লবণ দিয়ে সরকার চামড়ার মূল্যবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা কাজ করেছে। অনেক মাদ্রাসা আছে, লবণ ছাড়া চামড়া দিয়েছে। সরকার লবণ ছাড়া চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে না। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নষ্ট করেছে, ফলে তারা কাক্সিক্ষত দাম পায়নি।