নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলী সদস্য, সাবেক এমপি বর্ষীয়াণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য আর নেই। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় যশোর শহরের বেজপাড়ার বাসভবনে পরলোকগমন করেছেন তিনি।
তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে,দুই মেয়ে নাতি নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সন্ধ্যায় নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।
তাঁর বড় ছেলে বাবলু ভট্টাচার্য্য জানান- বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন বাবা পীযূষ ভট্টাচার্য্য। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে অধিকাংশ সময়ই বাসাতেই থাকতেন তিনি।
পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্যের দুই ছেলে, দুই মেয়ে সকলেই যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ ছিলেন। বড় ছেলে বাবলু ভট্টাচার্য্য চলচ্চিত্র শিল্পের সাথে যুক্ত ঢাকাতে থাকেন। ছোট ছেলে পার্থ এবং ছোট মেয়ে তাপসী সুইডেনে থাকেন। আর বড় মেয়ে যশোরের অন্যতম আবৃত্তিকার তপতী, স্বামী সন্তান নিয়ে কোলকাতাতে আছেন।
পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য ১৯৪০ সালের ২৩ এপ্রিল (১০ বৈশাখ) যশোরের মণিরামপুরের পাড়ালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সুধীর ভট্টাচার্য্য ও মায়ের নাম ঊষা রাণী ভট্টাচার্য্য। তিনি খাজুরা এমএন মিত্র বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি সেখান থেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক।
পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য মণিরামপুর উপজেলার মশিহাটি হাইস্কুল ও গোপালপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়া, তিনি কেশবপুর ডিগ্রি কলেজেও শিক্ষকতা করেছেন। মণিরামপুর ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।
অ্যাডভোকেট পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭৩ সালে মণিরামপুর উপজেলার ৯ টি এবং কেশবপুর উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত যশোর -৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকে সর্বশেষ ঘোষিত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির তিনি সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ২০১৬ সালে তিনি কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। যশোর শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ছিলেন যুক্ত। উদীচী, সুরধুনী, পুনশ্চ, যশোরের উপদেষ্টা ছিলেন। সামাজিক মানুষ হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য থাকাকালীন কেশবপুরে ১২টি এবং মণিরামপুরে ২৫টি প্রাইমারি স্কুল গড়ে তোলেন। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যাদি তিনিই সম্পন্ন করেন। তার গ্রামের স্কুল গোপালপুর স্কুলের বিজ্ঞানাগারে সেই সময় লক্ষাধিক টাকার যন্ত্রপাতি এবং মণিরামপুর কলেজেও একই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিজ্ঞানাগার আধুনিকায়নে সহযোগিতা করেন। মণিরামপুরে হাসপাতাল, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি অবকাঠামোগত উন্নয়নে তিনি সেসময় ভূমিকা পালন করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বেজপাড়ায় স্ত্রী মনিকা ভট্টাচার্য্যকে নিয়ে বসবাস করতেন।
তার ৪ ভাই, ৩ বোন। বড় বোন সবিতা ভারতের বিহারে থাকেন, মেজ বোন কবিতা মারা গেছেন, ছোট বোন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক পরিতোষ সরকারের স্ত্রী, বর্তমানে অবসর জীবনে দু’জনে ঢাকাতে অবস্থান করছেন। মেজ ভাই স্বপন কুমার ভট্টাচার্য্য সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। সেজ ভাই অরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সফল আইনজীবী ছিলেন। তিনি আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেন। ছোট ভাই বরুণ ভট্টাচার্য্য গ্রামে বসবাস করেন।
এদিকে সদাহাস্য, নির্মোহ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্যরে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে যশোরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার অসংখ্য শুভাকাঙ্খী তাকে শেষবারের মত দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে তার বাসায় যান। কেউ কেউ ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন তার মরদেহে।
জেলা জাসদের পক্ষ থেকে পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্যের মরদেহে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এছাড়াও তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন জাসদের নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ প্রয়াত পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্যের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন- কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক কুমার ঘোষ, সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুর রহমান রশিদ, আহসান উল্লাহ ময়না, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কায়েস, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফ আহমেদ বাপ্পি, জাসদ নেতা সনজিত বিশ্বাস রাবিন, পৌর জাসদের আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর, মশিয়ার রহমান, রবিউল ইসলাম প্রমুখ।