কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: কালীগঞ্জে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করায় আধুনিক মেশিনটি বিকল হয়ে পড়েছে। গেল তিন মাস ধরে রোগীদের আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে হাসাপাতালে আসা রোগীরা সময় ও আর্থিকভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ফলে বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার আল্ট্রাসনো করতে গিয়ে গড় ৫ থেকে ৮ গুণ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে রোগীদের। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্মবিত্ত মানুষ। তবে, কবে নাগাদ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের সেবা কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৫ জুন জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি প্রদান করা হয়। মেশিনটি স্থাপনের পর থেকে ২৯৬ টি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করার জন্য একজন সনোলজিস্ট থাকার কথা থাকলেও উপজেলা হাসপাতালটির জনবল কাঠামো অনুযায়ী সনোলজিস্ট পদ নেই। পূর্বের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন নিজেই আল্ট্রাসনোগ্রাম কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেশিনটি ব্যবহার করে আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে প্রেগনেন্সি জনিত আল্ট্রাসনো ১১০ টাকা। আর পুরো পেটের আল্ট্রাসনো করতে ব্যয় হয় ২২০ টাকা। একই আল্ট্রাসনো বেসরকারি হাসপাতালে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে করতে খরচ ৫শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। ফলে হাসপাতালের আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। সেখানে বাধ্য হয়েই বাড়তি টাকা দিয়ে আল্ট্রাসনো করছেন রোগীরা। পেটের সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন গৃহবধূ সাথিয়া খাতুন। ডাক্তার নির্দেশনা দিলেও অর্থাভাবে আল্ট্রাসনো করতে পারেননি। কেননা হাসপাতালের আল্ট্রাসনো বিভাগে গিয়ে জানতে পারেন মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কাছে বেশি টাকা না থাকায় আল্ট্রাসনো না করে বাড়ি ফিরে যান সাথিয়া। আরো কয়েকজন রোগী ও স্বজন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিন দিয়ে এই হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি জনিত পরীক্ষা কার্যক্রম চলছিলো। বর্তমানে আল্ট্রাসনো সেবা বন্ধ থাকা রীতিমতো দুঃখজনক। এই সেবা নিয়মিত চালু রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের চিন্তা করা উচিৎ। অন্যথায় তাদের মতো দুরদুরন্ত থেকে আসা মানুষের চরম ভোগান্তির শিকার হবেন। পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হবেন।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির সহকারী আসমা খাতুন জানান, একমাত্র আল্ট্রাসনো মেশিন বিকল হয়ে থাকায় সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন ধরে আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এরমধ্যে আমি একদিন মেশিনটিতে পরীক্ষা করেছি। কবে নাগাদ মেশিনটির কার্যক্রম নিয়মিত হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে দ্রুত আল্ট্রাসনো বিভাগ সচলের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।