স্পন্দন ডেস্ক: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা- যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
সোমবার বিকেল ৩টার দিকে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈদেশিক অনুদান থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, বৈদেশিক ঋণ ১২.২ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর ২ দশমিক ৪ শতাংশ।
কোন খাতে কত বরাদ্দ
জনপ্রশাসনে ৩১ লাখ ৬ হাজার ২১৮ কোটি টাকা (বাজেটের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ) স্থানীয় ও পল্লী উন্নয়নে ৪৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা (বাজেটের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ), প্রতিরক্ষায় ৪০ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা (বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ), জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৩৩ হাজার ৬০৩ টাকা (বাজেটের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ), শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে ১১ লাখ ৬৫৮ কোটি টাকা (বাজেটের ১৪ শতাংশ), স্বাস্থ্যে ৪১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা (বাজেটের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ) প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ৪৫ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা (বাজেটের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ), গৃহায়নে ৫ হাজার ১১০ কোটি টাকা (বাজেটের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ), বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মে ৬ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা (বাজেটের শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ), জ্বালানি ও বিদ্যুতে ২২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা (বাজেটের দুই দশমিক ৯ শতাংশ), কৃষিতে ৪৬ হাজার ২৬৮ হাজার কোটি টাকা (বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ), শিল্প ও অর্থনীতি সেবায় ৪ হাজার ২৭২ কোটি টাকা (বাজেটে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ), পরিবহন ও যোগাযোগে ৭১ হাজার ৩৪৪ হাজার কোটি টাকা (বাজেটের ৯ শতাংশ) প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বেতন, ভাতা ও ভর্তুকির মতো খরচ চলতি অর্থবছরের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে অর্থ উপদেষ্টার প্রস্তাবিত বাজেটে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে রাখা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাজেটের আকার ছোট করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
আগামী অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে উল্লেখ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন শেষে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে রেকর্ড করা হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনা। যা বিকাল ৩টায় সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।