অপ্রশস্ত সড়কে আড়াই বছরে নড়াইল অংশে দুর্ঘটনায় নিহত ৩৮, আহত ৯৭

ফরহাদ খান, নড়াইল : পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর ঢাকা-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ যানবাহনের চরম চাপ বেড়েছে। তবে বেনাপোল থেকে ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে পর্যন্ত দুই লেনের সরু সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিনিয়ত বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে চালকসহ যাত্রীসাধারণকে। বিশেষ করে যে কোনো মওসুমে একটু বৃষ্টি হলে সড়কের পাশে জায়গা না থাকায় যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। ঈদযাত্রায় সড়কে যানবাহনের চাপ আরো বেশি থাকায় দুর্ঘটনার আশংকা আরো বেড়েছে। পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর গত আড়াই বছরে নড়াইল-যশোর ৫২ কিলোমিটার সড়কে দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৯৭ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া-নড়াইল-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের কালনা এলাকায় ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর দেশের প্রথম ছয় লেনের ‘মধুমতি সেতু’ উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকা, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা, সাতক্ষীরা, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম. বরিশাল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যাহবাহন নড়াইল সড়ক হয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে মধুমতি ও পদ্মা সেতু দিয়ে। তবে ‘ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ে’র ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়ক দুই লেনের হওয়ায় সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি হলেই সড়কের পাশে জায়গা না থাকায় যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সড়কটি প্রশস্তকরণের দাবি সবার।
ঢাকাগামী বাস চালক সোহেল, আরমান, সাইফুলসহ অনেকে জানান, তারা যখন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যান, অথবা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসেন; তখন ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এই ১৩০ কিলোমিটার সরু সড়কের দুইপাশে তেমন জায়গা না থাকায় প্রায়ই বাস, ট্রাক উল্টে যাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের যানবাহন সাইড দিতে গিয়ে সড়কের পাশে উল্টে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
বাসযাত্রী শাহিন হোসাইন, নয়ন শেখ, সাবিনা খাতুন, রিয়া ইসলামসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বলেন, আমাদের দাবি ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত ছয়লেনের সড়ক দ্রুত নির্মাণ করা হোক। আশা করছি জনস্বার্থে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
এদিকে নড়াইলের তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, পদ্মা ও মধুমতি সেতু চালুর পর গত আড়াই বছরে যশোর থেকে নড়াইল সড়ক পর্যন্ত ৬৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮জন নিহত এবং ৯৭ জন আহত হয়েছেন। আসন্ন ঈদুল আযাহার সময়ে সড়ক দুর্ঘটনারোধে চালক, যাত্রীসহ সবার মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা-মাওয়া-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেন তথা ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। তার আগে মধুমতি সেতুর নড়াইল প্রান্ত থেকে যশোর পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক ২৪ ফুট থেকে দুইপাশে ছয় ফুট করে ১২ ফুট প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন অর্থবছরে কাজটি শুরু হবে বলে আশা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।