ফরহাদ খান, নড়াইল: নড়াইলে তিন গ্রামের মানুষের মাঝে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি ও সম্প্রীতির মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সবার সঙ্গে সম্প্রীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে প্রবীণদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী ক্রিকেট ও ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই প্রীতি ম্যাচের বেশির ভাগ খেলোয়াড় ছিলেন ৬০ থেকে ৮০ বছরের।
এছাড়া চীনা দো-ভাষীদের সঙ্গে গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষের বিভিন্ন ধরনের খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে দু’দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। নড়াইল সদরের ভদ্রবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় দুইদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।
এদিকে শিশু-কিশোরদের মাঝে দেশপ্রেম, সত্য ও সুন্দরের পথ সুদৃঢ় করতে বিভিন্ন খেলাধুলার পাশাপাশি শপথবাক্য পাঠ এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে। শিশুদের অংশগ্রহণে হাত ও শারীরিক কসরতের মাধ্যমে শাপলা ফুল ফোটানো, হাতে হাত ধরে ঢেউ খেলা, বিস্কুট দৌড়, লম্বা দৌড়, শিক্ষণীয় গল্পবলাসহ বিভিন্ন খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আয়োজকরা বলছেন, তথ্য প্রযুক্তি ও স্মার্ট মোবাইল ফোনে তরুণদের আসক্তির সময়ে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্মান আরো অটুট রাখতে ঈদের সময়ে দু’দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী এইসব খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া মাদকমুক্ত তরুণ ও যুবসমাজ গঠনের আহবান রেখে ঈদ আনন্দ-উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এ খেলা দেখতে পেরে খুশি ভদ্রবিলা, পলইডাঙ্গা ও মহারাগসহ আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।
পইলডাঙ্গা গ্রামের জহুরুল হক (৭৬) বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে ফুটবল, সাঁতারসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করেছি। তবে আমাদের ছেলেবেলায় ক্রিকেট খেলার তেমন সুযোগ ছিল না। তাই জীবনের শেষপ্রান্তে এসে ক্রিকেট খেলে অনেক মজা করেছি। কাজী হাফিজুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে পইলডাঙ্গা, ভদ্রবিলা ও মহারাগসহ আশেপাশের বিভিন্ন পেশার মানুষ একত্র হয়েছেন। শিশু, নারী, পুরুষ সবাই খেলায় মেতেছেন। গত ঈদেও আমরা এমন আয়োজন করেছিলাম। এখন আমাদের এলাকায় কেউ তাসসহ বাজে খেলার মধ্যদিয়ে সময় কাটান না।
শিশুরা জানায়, ঈদ পরবর্তী দু’দিন তাদের খুব আনন্দ হয়েছে। ভাই-বোন, বাবা-মা, চাচা-চাচি, দাদা-দাদিসহ আত্মীয়-স্¦জনরা গ্রামীণ খেলাধূলা উপভোগ করেছেন।
ঈদ আনন্দ-উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা ভদ্রবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পইলডাঙ্গা গ্রামের সন্তান কাজী রকিব সেন্টুসহ তরুণ ও যুব প্রজন্মের বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, জীবন-জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই ঢাকাসহ দুর-দুরান্তে চাকরি করেন। ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা হয় না। অন্যদিকে, গ্রামের তরুণ প্রজন্মও তথ্য প্রযুক্তির যুগে স্মার্ট মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি বেড়েছে। তাই তরুণ প্রজন্মকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ব্যতিক্রমী এই প্রীতি ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলাসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর ঈদের সময়ে ব্যতিক্রমী এইসব খেলার আয়োজন অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তারা।
অনুষ্ঠানে ডক্টর আফজাল হোসেন, নড়াইল সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কাজী হাসানুজ্জামান, বাবুল মোল্যা, উৎপল কুমার ঘোষ, আশরাফুজ্জামান রিপুসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।