স্পন্দন ডেস্ক : প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এর আগে এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বললেও সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হলে ফেব্রুয়ারিতে রোজা শুরুর আগেও ভোট হতে পারে বলে মত দিয়েছেন।
শুক্রবার লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় নির্বাচন এগিয়ে আসার বিষয়ে এ কথা বলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেড় ঘণ্টার বৈঠকের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে নিয়ে যৌথ বিফ্রিংয়ে আসেন খলিল।
তিনি বৈঠকের বিষয়ে যৌথ ঘোষণা পড়ে শোনান। বলেন, এ বৈঠকে নির্বাচনের তারিখসহ নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সব ধরনের বিষয় আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনি রোডম্যাপ বা ভোটের তারিখ ঘোষণার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
’অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক’ পরিবেশে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জনাব তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।”
খলিল বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
“জনাব তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও জনাব তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।”
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি রোজা শুরু হতে পারে। সে হিসাবে এ বৈঠকের পর ‘সংস্কার ও বিচারসহ’ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে এর সপ্তাহ খানেক আগে ভোটের তারিখ ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট আয়োজনের জোরালো দাবির মধ্যে কোরবানি ঈদের আগের দিন ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
লন্ডনে তারেকের সঙ্গে ইউনূসের বৈঠকের পর বিফ্রিংয়ে ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন শিগগির তারিখ ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “আজকে যৌথ বিবৃতিতে বলে দিয়েছি দুপক্ষই। নির্বাচন কমিশন আশা করি শিগগির একটা তারিখ ঘোষণা করবে।”
এপ্রিলের বদলে নির্বাচন এগিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় এ ঘোষণায় আপনারা সন্তুষ্ট কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ বৈঠক নিয়ে খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট’ বলে মন্তব্য করেন।
খসরু বলেন, “আমরা তো বলছি, নির্বাচনের আগে নয় শুধু, নির্বাচনের পরেও দেশ গড়ার কাজে সবাই একক সাথে কাজ করতে হবে।”
খলিল বলেন, “সন্তুষ্ট না হলে যৌথ ঘোষণায় আসার কথা নয় আমাদের।”
এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
‘ভোটের আগে সংস্কার-বিচার দৃশ্যমান হবে’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এ বৈঠক বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বেলা ২টায় পার্ক লেইনে ডরচেস্টার হোটেলে এ বৈঠক শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাজ্য সফরের সূচি ঘোষণার পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে আলোচনা বাড়তে থাকে। বৈঠক শেষে ৩টা ৪০ মিনিটে হোটেল ত্যাগ করেন তারেক রহমান।
এরপর যৌথ বিফ্রিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, “সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমরা সবাই একই কথা বলছি। যে বিষয়গুলোতে ঐক্যমত হবে, সেগুলোই সংস্কার হবে। সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। এমন নয় যে, সব সংস্কার এখনই হয়ে যাবে।”
জুলাই সনদ নিয়ে এক প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, স্বাভাবিকভাবে ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, স্বাক্ষরিত তো হবেই, না হবার কোনো কারণ তো নাই।
“খুব শিগগির হবে আশা করি। সংস্কারের বিষয়েও ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে, খুব কম সময়ের মধ্যে হবে।”
ভোটের আগে ও পরে সংস্কার চলমান থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগেও সংস্কার হবে, যেখানে ঐকমত্য হবে; নির্বাচনের পরেও সংস্কার অব্যাহত থাকবে। দেশ গড়ার যে প্রত্যয় নিয়েছি, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সবাই অনুভব করছে। সুতরাং আগে-পরে সংস্কার চলতে থাকবে।”
বৈঠকে শুধু কি নির্বাচনের বিষয়ে কথা হয়েছে, না কি দেশের রাজনৈতিক বিষয়েও কথা হয়েছে?
এমন প্রশ্নে খসরু বলেন, “সব বিষয়ে আলোচনাতো হবে স্বাভাবিক, আমরা তো নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। সবাই আমরা চাই দেশ গড়ার যে প্রত্যয় আমরা নিয়েছি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই কাজটা করব।”
তারেক রহমান কবে ফিরবেন তা নিয়ে বৈঠক আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চান একজন সাংবাদিক।
আমীর খসরু বলেন, “এ ব্যাপারে আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। তারেক রহমান সাহেব যখনই ইচ্ছে দেশে ফিরে যেতে পারবেন, সুতরাং সিদ্ধান্ত উনি নেবেন সময়মত।“
এক প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, যৌথ বিবৃতিতে সংস্কার ও বিচার বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতির কথা বলা হয়েছে।
“আমরা আত্মবিশ্বাসী। এ অগ্রগতি নির্বাচনের আগে দেখতে পাব।”
নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসা জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) বলেছে, ইসির সংস্কার ছাড়া তারা ভোটে যাবে না।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে খসরু বলেন, “এ ব্যাপারে এখানে কোনো আলোচনার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।“
প্রতিটি দলের নিজস্ব মতামত থাকার কথা তুলে ধরে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, “আমরা সকলকে নিয়ে নির্বাচনটা করতে চাচ্ছি।”
এপ্রিলের ভোটের যে ঘোষণা, সেখান থেকে সরকার কিছুটা সরে আসছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যৌথ ঘোষণায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। যদি সব কাজ সময়মত আমরা করতে পারি, বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হয়, নিশ্চয় সেটা করা যেতে পারে।”
এ বিষয়ে খসরু বলেন, “(একান্ত) বৈঠকের আগে প্রতিনিধিসহ আলোচনা হয়েছে। পরে ওনারা একান্তে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছেন।”