মেহেরুল্লানগর রেলস্টেশন আধুনিকায়ন ও যবিপ্রবিতে শাটল ট্রেন চালুর দাবি

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:২৩:০৩ পিএম

বিল্লাল হোসেন: যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম শাটল ট্রেন চালুর জোর দাবি উঠেছে। এছাড়া চুড়ামনকাটির ঐতিহ্যবাহী মেহেরুল্লানগর রেলস্টেশনটি আধুনিকায়ন করে পূর্নাঙ্গভাবে চালুর দাবি করা হয়েছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সময় ও আর্থিক অপচয় রক্ষা হওয়ার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন হবে বলে সচেতন মহলের অভিমত। বর্তমানে শাটল ট্রেন চালু ও মেহেরুল্লানগর রেলস্টেশন আধুনিকায়ন করা যেনো মানুষের প্রাণের দাবি হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যশোর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যবিপ্রবি পর্যন্ত একটি শাটল ট্রেন চালুর মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যবিপ্রবির প্রথম উপাচার্য প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম সরকার (আর আই সরকার) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পর্যন্ত শাটল ট্রেন চালু, মেহেরুল্লাহ নগর রেল স্টেশনটি আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেন। সংশ্লিষ্ট দফতরে তিনি যোগাযোগও করেছিলেন। কিন্তু উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি । পরবর্তীকালীন উপাচার্য. প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার পরিকল্পনা নেন যশোর বিমান বন্দর হতে ঝাউদিয়া, বাদিয়াটোলা, নলডাঙ্গা, বাগডাঙ্গা, দৌগাছিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে যবিপ্রবির ক্যাম্পাস পর্যন্ত একটি রাস্তা নির্মাণের। যাতে বিমান থেকে নেমে সকলে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারেন। রাস্তাটি নির্মাণের সাথে এই এলাকা দিয়ে একটি ইকোনমিস ভিলেজ এবং ইপিজেড শিল্প এলাকা প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা ছিলো তার। তিনিও চাকরি জীবন থেকে অবসরে যাওয়ার পর এসব পরিকল্পনা থমকে যায়। অথচ ওই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে এলাকার জনগনের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখতো ও ব্যবসা বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটার সম্ভাবনা ছিলো।  অথচ প্রায় ১৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে, যবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, রংপুর,দিনাজপুর,বগুড়া, ঠাকুরগাও, পঞ্চগড়ের ছাত্র ছাত্রীদের ট্রেনে যাতায়াতকালে যশোর রেলস্টেশন পর্যন্ত যেতে হয়। এতে তাদের অর্থ ও সময় দুটোই অপচয় হচ্ছে। যবিপ্রবিতে শাটল ট্রেন ও চুড়ামনকাটির মেহেরুল্লাহ নগর রেলস্টেশন চালু করে আধুনিকায়ন করলে এটি লাঘব হবে। শিক্ষার্থীরা এই অসুবিধার নিরসন চান। শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।

যবিপ্রবির শিক্ষার্থী তামজিদ আহমেদ জানান, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে শাটল ট্রেন চালুর দাবি করে আসলেও বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেই। শাটল ট্রেন চালু করলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দুর হবে।

আরেক শিক্ষার্থী তানিয়া সুলতানা জানান, চুড়ামনকাটি এলাকায় অনেক শিক্ষার্থী ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। বাস বা অন্য কোন যানবাহনে চড়ে ক্যাম্পাসে যেতে তাদের দারুন অসুবিধা হয়। চুড়ামনকাটির মেহেরুল্লানগর রেলস্টেশন আধুনিকায়ন করে শাটল ট্রেন চালু করলে অনেক সুবিধা হতো। কেননা স্টেশন থেকে শাটল ট্রেন যোগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারতেন। যৌক্তিক এই দাবি বাস্তবায়নের দাবি করে এই শিক্ষার্থী। 

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজসেবক অধ্যাপক ও প্রবীন সাংবাদিক মসিউল আযম জানান, তার জীবদ্দশায় এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারলে অত্যান্ত আনন্দ লাভ করতেন।  এ ব্যাপারে জনমত গঠনে সাংবাদিক সমাজের অগ্রনী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার জানান, ঐতিহ্যবাহী মেহেরুল্লানগর স্টেশনটি প্রায় বন্ধ হতে চলেছে। বর্তমানে এখানে কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে। মুন্সী মেহেরুল্লাহর প্রতি সম্মান দেখিয়ে হলেও কর্তৃপক্ষের স্টেশনটি আধুনিকায়ন করা উচিৎ। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম শাটল ট্রেন চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ করেন তিনি।

যবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন জানান, যবিপ্রবিতে শাটল ট্রেন চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত দিনে শাটল ট্রেন চালুর দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। শাটল ট্রেন ও মুন্সী মেহেরুল্লানগর রেল স্টেশন সংস্কার করে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয় তাহলে বৃহত্তর যশোর ও খুলনা থেকে আগত শিক্ষার্থী ,শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতে অনেক উপকৃত হবেন। তারা চুড়ামনকাটি নেমে শাটল ট্রেন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারবেন। ফলে পরিবহন খরচ কমে যাবে। অবসরে চলে যাওয়া দুই জন উপাচার্যের মতো তিনিও শাটল ট্রেন চালুর বিষয়ে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।