সেই অধ্যক্ষের পাশে নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার, চার্জশিট ১৬ মার্চ !

ফরহাদ খান, নড়াইল: নড়াইলের লাঞ্ছিত সেই অধ্যক্ষের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশবরেণ্য নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার। শনিবার দুপুরে রামেন্দু মজুমদারের পক্ষ থেকে লাঞ্ছিত অধ্যক্ষ স্বপন কুমারকে একটি নতুন টিভিএস মোটরসাইকেল উপহার দেয়া হয়েছে। এদিকে, লাঞ্ছিতের ঘটনায় ১৬ মার্চ চার্জশিট দেয়ার দিন ধার্য করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস এবং স্থানীয় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর রিন্টুর কাছ থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করাসহ তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা জানার পর দেশবরেণ্য নাট্যকর ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার অধ্যক্ষকে এ উপহার দিয়েছেন।

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের মোটরসাইকেল উপহার পেয়ে আমি ভীষণ খুশি। এর আগেও দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ আমার পাশে থেকেছেন। আমাকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

মোটরসাইকেল উপহার দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর রবিউল ইসলাম, নড়াইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, নড়াইল পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা, রামেন্দু মজুমদারের প্রতিনিধি সৈয়দ আপন আহসান, প্রভাষক প্রশান্ত বিশ্বাস, প্রভাষক প্রশান্ত সরকার, আব্দুল  মুকিত লাবলু, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল কুমার বিশ্বাস, হবখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম আনিসুল ইসলাম, টিভিএস মোটরসাইকেলের কর্মকর্তা পলাশ ঘোষ, শোরুমের মালিক গিয়াস উদ্দিন খান ডালু, ইকবাল হোসেন, গাউছুল আজম মাসুম, হুমায়ুন কবীর রিন্টু, সমাজসেবক লিয়াকত হোসেন, কলেজছাত্রী শ্যামা বিশ্বাসসহ অনেকে।

প্রসঙ্গত. মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে ভারতের বির্তকিত রাজনৈতিক নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখে-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর ২০২২ সালের ১৮ জুন সকালে কলেজে আসে রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মুছেনি রাহুল। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা ১৮ জুন বিকেলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতারমালা পরিয়ে প্রতিবাদ জানান।

এ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মোটরসাইকেলসহ শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোঁড়ে। ঘটনার সময় অন্তত ১০ জন ছাত্র-জনতা আহত হন।

এ ঘটনায় ওই বছরের ২৭ জুন অজ্ঞাতনামা ১৭০ জনের নামে মামলা করে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলায় সদর থানার ওসি শওকত কবির ও মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিনকে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার ওসি মাহমুদুর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত নয় আসামি এখন জামিনে আছেন। বিভিন্ন মেয়াদে কারাগারে থাকার পর তারা জামিন পেয়েছেন। এ ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তাদের নামে চার্জশিট দেয়া হবে।

নড়াইল জজকোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনাসহ পুলিশের কাজে বাধা ও সহিংসতার ঘটনায় আগামী ১৬ মার্চ চার্জশিট দাখিলের জন্য দিন ধার্য হয়েছে।

এদিকে, ঘটনার ৪৬ দিন পর ২০২২ সালের ৩ আগস্ট কর্মস্থলে যোগদান করেন অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ^াস। তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান, নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাসহ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ।