ফার্মেসির ওষুধ খেয়ে মৃত সন্তান প্রসব করায় স্ত্রীকে তালাক !

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২ মে , ২০২৪, ০৩:৪৯:১৩ এম

 

সিরাজুল ইসলাম, কেশবপুর : কথিত ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে রাতে মৃত সন্তান প্রসব করেছে কেশবপুর উপজেলার গড়ভাঙ্গা গ্রামের চায়ের দোকানদার আজিজুর রহমানের স্ত্রী রুখসানা বেগম। এ ঘটনায় সকালে সন্তানকে হত্যার অভিযোগ তুলে তাকে তালাক দিয়েছে তার স্বামী।  ঘটনাটি ঘটেছে গত ২০ মার্চ গড়ভাংগা গ্রামে।

স্থানীয়রা জানান, গড়ভাংগা গ্রামের মোবারক গাজীর ছেলে আজিজুর রহমান গাজী ১৯ মার্চ বিকেলে তার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অসুস্থ স্ত্রী রুখসানা বেগমকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে গড়ভাংগা বাজারে নিয়ে আসে। পরে স্বামীর কথামত ওই বাজারে মুক্তা ফার্মেসির কথিত মনি ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ নিতে বলে। রুখসানা বেগম ওই ফার্মেসিতে গেলে ডাক্তার তাকে ওষুধ দেন। এ সময় কথিত মনি ডাক্তার তার কাছ থেকে ওষুধের দাম বাবদ ৩শ টাকা নেয়। ওই ওষুধ নিয়ে সে তার স্বামীর সাথে দেখা করে বাড়িতে ফিরে আসে। প্রতিদিনের মত তারা স্বামী-স্ত্রী রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষে রুখসানা ওই ওষুধ সেবন করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ঘন্টাখানের পর তার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে তার গর্ভপাত ঘটে। এ সময় তার একটি মৃত ছেলে সন্তান জন্ম দেয়। সদ্য ভূমিষ্ঠ মৃত নবজাতককে ওই রাতেই তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে মৃত সন্তান তূমিষ্ঠ হওয়ার জেরে শুরু হয় গৃহবধূ রুখসানা বেগমের ওপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন। পর দিন সকালে (২০ মার্চ) রুখসানার পিতা-মাতাকে খবর দিয়ে এনে তাদের আটক করে রাখা হয়। এরপর তারা জোর করে তালাক নামায় স্বাক্ষর করে নিয়ে রুখসানাসহ তার পিতা, মাতা ও তার ছোট বাচ্চাসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ সময় তার বড় ছেলেকে তার স্বামী ও তার দাদী কেড়ে নেয়। এর আগে থেকে আজিজুর রহমান মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নি এলাকার কাজী মোস্তফার ছেলেকে ডেকে এনে তাদের বাড়িতে বসিয়ে রাখে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাত্র ৩০০ টাকার জন্য ডাক্তার মনি এক মায়ের সন্তানকে হত্যা করার কারণে একটি সংসার ভেঙেছে। এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক তার শাস্তি দাবি করেন।

গৃহবধু রুখসানা বেগম বলেন, আমার তৃতীয় সন্তান আমার গর্ভে আসার পর থেকে আমার স্বামী ওই সন্তান নষ্ঠ করার জন্য আমাকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। আমি তাতে রাজি না হওয়ায়, আমার স্বামী ও শাশুড়িসহ ওদের বাড়ির লোকজন আমাকে নানা ভাবে নির্যাতন করতো।

রুখসানার পিতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়ের মৃত সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে জামাই আজিজুরের বাড়িতে পাঠাই। এসময় তারা আমার স্ত্রীকে আটক করে রেখে আমাকে খবর দিলে আমিও ওখানে যাই। যেয়ে দেখি তারা আগে থেকেই কাজী ডেকে এনেছে। ওই সময় তারা জোর করে আমার মেয়েকে দিয়ে তালাক নামায় স্বাক্ষর করে নেয় এবং ওই তালাকে আমার ও আমার স্ত্রীকে দিয়ে স্বাক্ষর করে নিয়েছে

আজিজুর রহমানের মা জবেদা বেগম বলেন, আমার বউমা রুখসানা আমাদেরকে না জানিয়ে ডাক্তার মনির কাছ থেকে ওষুধ এনে খেয়ে সন্তান নষ্ট করেছে। এ্ অপরাধে আমরা তাকে তালাক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। ওই তালাকে তারাও স্বাক্ষর করেছে। আজিজুর রহমানকে সাক্ষাতে না পেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে একাধিক বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কথিত ডাক্তার মনি বলেন, আজিজুরের স্ত্রী রুখসানা আমার দোকানে ওষুধ নিতে এসেছিলো। কিন্ত আমি তার কাছে কোন ওষুধ বিক্রি করিনি।