যশোরে ১৩ রোগীর নমুনায় কলেরার জীবাণু শনাক্ত

এখন সময়: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৩৭:০০ পিএম

 

বিল্লাল হোসেন: যশোর পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা পানিতে কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ রোগীর নমুনা সংগ্রহের পর তিন ধরনের পরীক্ষা করে এই ফলাফল মেলে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঢাকা মহাখালীর রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ড. তহমিনা শিরিন সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি ফলাফলের কপি শনিবার তার কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পৌরসভার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাস থেকে যশোরে ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। নানা বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ওয়ার্ডের মধ্যে জায়গা না থাকায় রোগীদের হাসপাতালের বারান্দা ও প্রসূতি ওয়ার্ডের পাশে বারান্দায় থাকার জায়গা করা হয়েছে। প্রতিদিন একাধিক রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসাসেবায় হিমশিম অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি আরও জানান, ডায়রিয়ার প্রকোপের বিষয়টি আইইডিসিআরের কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে অবগত করা হয়। প্রকোপ বাড়ার কারণ শনাক্ত করার জন্য ৩১ মার্চ আইইডিসিআরের থেকে একটি গবেষক দল যশোরে আসেন।  এরপর তারা তদন্ত শুরু করেন। ৪ সদস্যের টিমের নেতৃত্বে ছিলেন সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. জেবুননেছা। তারা হাসপাতালে গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের সাথে কথা বলেন। নমুনা সংগ্রহের পর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার পানি সংগ্রহ করেন। এগুলো পরীক্ষা করে গত শনিবার ফলাফল যশোরে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ও পানিতে কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, আইইডিসিআরের প্রতিবেদনের কপি তিনি হাতে পাওয়ার পর হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৩ রোগীর নমুনা সংগ্রহের পর তিন ধরণের পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে র‌্যাপিড ডায়াগনস্টিকে  ৫৪ ভাগ ও কালচারে ৬২ ভাগ কলেরার জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ১৫ জনের পিসিআর পরীক্ষায় ৪ জনের শরীরে শতভাগ কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে।  প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পৌর এলাকার বারান্দীপাড়া মোল্যাপাড়া, সিটি কলেজপাড়া, বেজপাড়া তালতলা, খড়কি এলাকার পানি পরীক্ষা করে কলেরা জীবাণুর অস্তিত্ব রয়েছে।  এছাড়া এসব এলাকার পরিবেশও অনেক খারাপ। সিভিল সার্জন আরও জানান, কলেরার জীবাণু ধ্বংসে করণীয় কি তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, আইইডিসিআরের গবেষণা দলের পাঠানো পরীক্ষার ফলাফলের কপি ই-মেইলে পেয়েছেন। পৌরসভার পানি ও রোগীর নমুনায় কলেরার জীবাণু শনাক্তের বিষয়টি প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, এর আগে কয়েকজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া যায়নি বলে  আইইসিডিসিআরের গবেষণা দল ও স্থানীয় কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছিলেন। এবার কলেরার জীবাণু শনাক্তের বিষয়টি খুবই খারাপ সংবাদ। এই বিষয়ে সকল শ্রেণির মানুষকে বেশি বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি সরবরাহ শাখা) বিএম কামাল আহমেদ জানান, বারান্দীপাড়া, মোল্যাপাড়া ও বেজপাড়া তালতলায় সরবরাহ করা পানিতে একটু সমস্যা ছিলো। পানি ছাড়ার সাথে মারাত্মক দুর্গন্ধ বের হতো। সেই সমস্যা এখন আর নেই। তিনি আরও জানান, বর্তমানে দুর্গন্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।