১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নেমে ৩ নম্বরে

আঘাত হেনে ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন গভীর নিন্মচাপ

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০৬:২২:০৬ পিএম

 

 

স্পন্দন ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় মোখা এখন গভীর স্থল নিন্মচাপে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা শহর, টেকনাফ উপজেলা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং অন্যান্য উপজেলায় আঘাত হানার পর দূর্বল হয়ে পড়েছে। তা-বে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের প্রভাবের শিকার হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার মানুষ। মহাবিপদ সংকেত নামার পর আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছে মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় মোখা রোববার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে। এরইমধ্যে এটি দুর্বল হয়ে গভীর নিন্মচাপে পরিণত হয়েছে। তাই বন্দরগুলোতে বিপদ সংকেতও কমিয়ে আনা হয়েছে।

 আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

 বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশ উপকূল পেরিয়ে যায়। এটি দুর্বল হয়ে মিয়ানমারের সিত্তওয়েতে স্থল গভীর নিন্মচাপে পরিণত হয়েছে। এরপর স্থলভাগে আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে মোখা।

আবহাওয়া দপ্তর জানায়, মোখা বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে উপকূলবর্তী কক্সবাজার জেলার আট উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের প্রভাবের শিকার হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার মানুষ।

রোববার সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে শুরু করে কক্সবাজার জেলা শহর, টেকনাফ উপজেলা ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এবং অন্যান্য উপজেলায়। দুপুরের দিকে বৃষ্টি ও বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। বিকাল ৪টার পর উপকূল সংলগ্ন এলাকায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

টানা এক ঘণ্টার বেশি প্রচ- বাতাস ও বৃষ্টির পর আবহাওয়া ধীরে ধীরে শান্ত হতে থাকে। বিকাল ৫টার পর বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে তথ্য আসতে থাকে।

জেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাস্তাঘাটে গাছপালা উপড়ে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে প্রচুর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টিনের ও কাঁচা ঘরবাড়ি। টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। তবে জেলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

সন্ধ্যায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের প্রধান বিভীষণ কান্তি দাশ সাংবাদিকদের বলেন, জেলার ৫৭টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪৬৯টি বাড়ি আংশিক এবং ২০২২টি ঝুপড়ি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে।     

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের পর জেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নেয়। তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছিল বলে জানান নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রধান।

এ দিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সহস্রাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, “আমরা স্থানীয় মেম্বার ও লোকজনের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিচ্ছি। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।”

টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ির উপর এসব গাছ পড়ে ক্ষতি হয়েছে। বাজারে দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব কেটে যাওয়ার পর পরই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। কক্সবাজারে ২ লাখ ৫০ হাজার আশ্রিত মানুষের মধ্য থেকে সাড়ে ১২ হাজার ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরেছেন।

রাত ৮টায় জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা উবায়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের মধ্যে কিছু কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। প্রায় আড়াই লাখ আশ্রিতের মধ্যে বর্তমানে রয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৪৮ জন। লোকজন নিজ ইচ্ছেতে আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করছেন।’