মোরেলগঞ্জে বীরমুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে জাল সনদ দিয়ে অর্থ হাতানোর অভিযোগ

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:৫৪:১৪ এম

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে  শাহজাহান শেখ নামে এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে জাল সনদ প্রদানের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী বিজলী আক্তার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল জামুকাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

উপলোর পঞ্চকরন ইউনিয়নের কুমারিয়াজোলা গ্রামের বিজলী আক্তারের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একই এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান শেখ বিজলীর বাবা মৃত আক্কাস আলী শেখের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্তিতে তৎকালীন কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খানের দোহাই দিয়ে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে একটি জাল সনদ প্রদান করে।

২০১৭ সালে অনলাইন মুক্তিযোদ্ধা যাঁচাই বাছাইয়ে ওই সনদ জাল প্রমাণিত হলে এ নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মো. শাহজাহান ও বিজলীর মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজলী মোরেলগঞ্জ থানায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খানের অনুরোধে এবং তাঁর মধ্যস্ততায় তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার নামের আসল সনদ দেয়ার শর্তে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি (নং ৩৩/১৭) অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নেয় বলে বিজলী আক্তার তার অভিযোগে উল্লেখ করেন।

পরবর্তীতে শাহজাহান বিজলী’র বাবার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত করার জন্য পুরনায় বিভিন্ন খাতে প্রয়োজন দেখিয়ে আরো ৪০ হাজার টাকা নেয়।এরপর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান তার ঠিকানা পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন যশোরে অবস্থান করে।

গত ১৮ জুলাই শাহজাহান শেখ মোরেলগঞ্জে আসার খবর পেয়ে বিজলী আক্তার উপজেলা চত্বরে এসে শাহজাহানের সাক্ষাৎ পেলে শাহজাহানের কাছে তার দেয়া টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বিজলী ও তার সাথে থাকা লোকজনের সঙ্গে শাহজাহান শেখের বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে  উক্ত শাজাহান শেখের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আদায় ও জাল সনদ প্রদানের বিষয়টি তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে বিজলী আক্তার গত বৃহস্পতিবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা), জেলা প্রশাসক বাগেরহাট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোরেলগঞ্জ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

অপরদিকে উপজেলার চন্দনতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার শাজাহান শেখের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির প্রলোভনে শাহজাহান তার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে জাল সনদ প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের যাচাইবাছাইয়ে তার নাম অর্ন্তভুক্তির প্রলোভনে তার কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার অভিযোগ করেন।

শাহজাহানের কাছে প্রতারণার শিকার বিজলী আক্তার ও সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার আরো জানান, শাহজাহান একজন প্রতারক, উপজেলার বহু লোকের কাজ থেকে বীরনিবাস, চাকরি ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেয়ার প্রলোভনে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে এখন স্থান পরিবর্তন করে যশোরে বাসবাস করছেন।

এ বিষয়ে মো. শাহজাহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিজলীর সাথে ভুল বোঝাবুিঝর কারণে আমার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করে। পরবর্তীতে আদালতে মামলাটি খারিজ হয়ে যায় এবং সুলতানের কাছ থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি।

মো. শাহজাহানের এসব প্রতারণার বিষয় জানতে চাইলে তৎকালীন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী খান বলেন, আমার মধ্যস্থতায় নয় মামলাটি আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়েছে।

বিজলী আক্তারের দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম. তারেক সুলতান জানান, তার দপ্তরে এক মহিলা একটি অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় তিনি অভিযোগটি দেখতে পারেননি, তবে রোববার তিনি অভিযোগ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।