পাপড়ি ও পরাগের ঝলক

এখন সময়: মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:৫৯:৩২ পিএম

 

শিবলী মোকতাদির

ঝলক

সঞ্চিত নৈরাশ্যের মাঝে তুমি এলে বিদেশি ভ্রমর

নয়নের নিকট হতে আমাকে দেখাবে বলে

এই ফুল কতটা লোকজ, কতটা গ্রামীণ!

আমি মাফলারে দীর্ঘায়িত শীত চাপা দিয়ে

সুন্দরের মর্মরিত অধিপাঠ করবো বলে;

তোমাকে বলেছি—ফুল নয়,

আমি ফলের গীতিময়তা ভালোবাসি।

কখনও অতিরঞ্জিত কখনও বা অতিমাত্রিক।

জানি, তবু তুমি ফুলের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।

বলিষ্ঠ ও স্বতন্ত্র পাপড়ির প্রত্যাশিত দুঃখ, শোক

জরা ও যন্ত্রণার আবেদন বয়ে আনবে।

আমার চোখ উঠবে ভিজে।

বাতাস বইবে তখনই হঠাৎ বেহুদা বসন্তের

ঝরে পড়বে পালক। স্থিরচিত্রে গজিয়ে উঠবে

দুরভিসন্ধির বল্লম হাতে জলে-স্থলে অসংখ্য প্রজাপতি

কতিপয় কীট ও পরাশ্রয়ী দুরাচার।

 

 

 

ফলে ছাতিম ফুলে মিশে যাবে যৌনতার ঘ্রাণ

এই নিয়ে শিশির আর সন্তানে চলবে কর্মহীন এক ক্যারিক্যাচাল।

তাদের ভেদ আর ভাষণে নরক হবে গুলজার।

আজানের পর আজান চলবে, সুতরাং শান্ত হলেও

বাহাস চলবে দেদারছে চলন্তকাল।

আমার বিবিধ কালের, সালের জমানো বিস্ময়গুলো

বিকিরণে বিস্তারিত হবে,

ভেঙে যাবে ব্যাঞ্জনবর্ণের হাট।

গ্যাঁট খুলে গেলে তসবির দানাগুলো যেভাবে ছিটকে পড়ে

ব্যক্তিগত নির্মিত শৈলীর নীতি ও রীতির শীলিত স্বরূপ—

সেইভাবে অকারণে ফুল ও ফলের প্রভূত সংগ্রামে

অন্ধের আলেয়া নিয়ে আমাকে দেখতে হবে;

 

কেবলই পোড়া পোড়া চিত্রদাহ।

ফুল বলবে আমাকে ভাঙো। ফল বলবে আমাকে জোড়ো।

আমি কি আর আস্ত হবো না?

 

 

 

কুড়িয়ে পাওয়া যুদ্ধাহত কিছু বৈকালিক বাতাস

 

যদি আমার পক্ষে থাকে, শোনো—

স্বোপার্জিত অভিজ্ঞতায় শ্যাওলা বা পারদের ন্যায়

ফের আমি একত্রিত হবো।

ভ্রমর, ওগো ভ্রান্তিবিলাসী ভ্রমর—স্বরবর্ণের দেশে গিয়ে

তুমি বরং ফুল ফোটানোর কৌশলটুকু খোলাসা করে দিয়ে এসো

তাতে চুমুর চক্রান্তে বাধা পড়ুক

সে দেশের প্রতিটি বালিকা ও বালক।

মিলনাকাঙ্ক্ষায় তাদের হাতে দিও, যদি পারো—

পাপড়ি ও পরাগের ঝলক।   

 

 

 

বৈশাখী পাড়া

 

হাত থেকে পড়ে বৈশাখী ফুল

ভেসে নিলো ঠাঁই নদীর দুকূল

এপাড়ে তোমার শত অশ্বশালা

ওপাড়ে গাঁথে মেয়ে পুষ্পমালা

আমি তো নৌকাতে বুদ্ধিবিহীন

মাঝির মাত্রাতে সীমিত স্বাধীন

ধরেছি এ হাল দেখে ছায়াপথ

হাসে মিটিমিটি যে তারা অসৎ

কানে কানে বলে বিবাহ বাতিল

উজানের কথা ঢালে উড়ন্ত চিল

পরেছে মেহেদী হাতের আঙুল

ভাবনায় ভেসে যায় বৈশাখী ফুল

বৃষ্টিতে ভিজে, কেঁদে হলো সারা

অচেনা আলোয় বৈশাখী পাড়া

ঘিরে থাকে গান কনের দু’পাশ

বাজিতে হেরে হয় একান্ন তাস

ঝড়ের ঝাপটাতে ভাঙে ঘাসফুল

আমি বর ডুবেছি বেদনা ব্যাকুল

ক্ষণিক তামাশা চলে দৃশ্য কেটে

দুঃখে দরদ হাসে বক্ষটা ফেটে

তাদের কী দোষ যারা দিশেহারা

ঘুরে মরে বিবাহ বৈশাখী পাড়া