❒মজনুর রহমানের ফেসবুক ওয়াল থেকে

ছেলে বেলার বন্ধুদের সাথে শেষ দেখা হলো না বিপ্লবীরূপি মেজদির, ওপারে ভাল থেকো

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৫:৪০:২৮ এম

 

আমাদের প্রিয় বান্ধবী বিপ্লবী বিশ্বাসের অকাল প্রয়ানের খবরটি প্রথম পেয়েছিলাম রোববার (৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে অপর এক বান্ধবীর কাছ থেকে। সবাইকে ছেড়ে হঠাৎ করেই তার না ফেরার দেশে চলে যাবার খবরটি এভাবে প্রত্যাশা করিনি কখনও। সৃষ্টিকর্তা যাকে নিবে তাকেতো যেতেই হবে, এই কথা ভেবে নিজেকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম।

কিন্তু রাতভর বিপ্লবীর সেই ছেলেবেলা থেকে শুরু করে কলেজ জীবনের হাজারো স্মৃতি হৃদয়ে দোলা দেয়। বিপ্লবী ছিল আমাদের (সহপাঠি) ক্লাসমেট। কিন্তু হাজারো সহপাঠির ভেতর বিপ্লবী ছিল হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশের পর তার সাথে আরো ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। মেয়ে বন্ধুদের মধ্যে কলেজে বিপ্লবীর সবচেয়ে কাছের ছিল বিউটি ও সম্পা। দেখলে মনে হতো একই বৃন্তে তিনটি ফুল। এ ছাড়াও তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল শিরিন, রেহেনা, রুমিচা, পারভীন, শামছুন্নাহার, পুতুলসহ আরো কয়েকজন।  আর ছেলেদের মধ্যে আমি, বাবুল, তাজু, সুমন, শামিমসহ আরো কয়েকজন। বিপদে-আপদে, সুখে-দুখে আমরা ছিলাম একে অপরের পরিপূরক। পারিবারিকভাবে বিপ্লবীর পরিবারের সাথে ছিল আমাদের ভিশন সখ্যতা।সপ্তাহে অন্তত: দুই থেকে তিন দিন ওদের বাড়িতে যেতাম আমরা। পূজা আসলে তো কথায় নেই। আমরা না গেলে যেন তার আনন্দটা পরিপূর্ন হতোনা। সে ছোটবেলা থেকেই ছিল চঞ্চল প্রকৃতির। তবে বুদ্ধিমত্তাও কম ছিলনা তার। ওছিল খুব হেল্পফুল। বন্ধুদের মধ্যে মানঅভিমান হলেই বিপ্লবী এগিয়ে এসে সমাধান করতো। আবার দুষ্টুমি করলে শাসন করতেও দ্বিধা করতনা। ফলে আমরা অনেকেই তাকে ভয়ও পেতাম। বিপ্লবী, বিউটি ও সম্পা আমাদের বাড়িতে মাধে মধ্যে বেড়াতে আসতো।

তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে বিপ্লবী ছিল মেজো। ফলে আমরা তাকে আবদার করে মেজদি বলে সম্বোধন করতাম। তাতে সে খুশি হতো। বিউটির বিয়েতে(ডা.দিপকের সাথে বিয়ে) আমি, বাবুল, বিপ্লবী, সম্পাসহ কয়েকজন বন্ধু গিয়েছিলাম। খুব আনন্দ করেছিলাম ওর বিয়েতে।

লেখাপড়ার গন্ডি শেষ করে সে কলেজে শিক্ষকতা করেছেন কয়েক বছর। বিপ্লবী চাকুরি পায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা(এনএসআই)র কর্মকর্তা হিসেবে।মৃত্যুর আগপর্যন্ত সে ছিল এনএসআইয়ের অতিরিক্ত পরিচালক। যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার তার গর্বিত স্বামী। শ্বশুরবাড়ি নেত্রকোনার প্রতি তার ছিল প্রচন্ড টান। ফুটফুটে দুুটি পুত্র সন্তান রয়েছে তার। এনএসআইয়ে চাকুরির পর ইচ্ছা থাকলেও সে আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারতো না। কিন্তু সে সব সময় তার ছোটভাই প্রকাশের মাধ্যমে আমাদের খোজখবর রাখতো। বছর দুয়েক আগে কথা হয়েছিল একবার। আমার ছেলে সেনাবাহিনীর লংকোর্সে (কমিশন্ড অফিসার) চান্স পাওয়ার খবরে খুশি হয়ে আমাকে গর্বিত পিতা হিসেবে উল্লেখ করে অভিনন্দন জানিয়েছিল। সর্বশেষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে যশোরে স্বামীর(এসপির বাসভবন) কাছে ছিলেন। গতমাসে বিপ্লবীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে  ছোটবেলার বান্ধবী শিরিন, রেহেনা, রুমিচা, বিউটি, শামছুন্নাহার, নার্গিসসহ কয়েকজন দিনভর তার সাথে সময়(এসপির বাসভবন) কাটান। এ দেখায় যেন ছিল তাদের শেষ দেখা।

বিপ্লবীর ছোটভাই প্রকাশ জানিয়েছিল মেজদি এবার বন্দুদের সাথেও দেখা করার ইচ্ছাপোষন করেছে। বিপ্লবীর ইচ্ছা ছিল দূর্গাপূজার সময় আমাদের সাথে দেখা করার। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সে সময় দিলনা। এরই মধ্যে তার অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয়। তারপর...অকাল প্রয়ান। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি আমাদের প্রিয় বান্ধবী বিপ্লবী রূপী মেজদিকে তুমি ওপারে ভাল রেখো। গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি স্বামী, ছেলেসহ পরিবারের প্রতি।