নারী প্রধান বিচারপতি না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর আফসোস

এখন সময়: শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৬:৪৮:১৫ এম

 

স্পন্দন ডেস্ক: সমাজের কিছু অচলায়তন এখনও দূর না হওয়ায় একজন নারীকে প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত করা যায়নি বলে আফসোস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে বাংলাদেশে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ‘বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে- বলেও মন্তব্য করেছেন সরকার প্রধান।

শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা।

নিজের আফসোসের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “একটা আফসোস রয়ে গেছে আমার, আমার খুব ইচ্ছে ছিল, প্রধান বিচারপতি একজন নারীকে আমি করে যাব। কিন্তু আমাদের সমাজ এত বেশি কনজারভেটিভ, এগুলো ভাঙতে সময় লাগে। সেজন্য করতে পারেনি। এ আফসোসটা থেকে গেল।”

শিক্ষা, প্রশাসনসহ নানা খাতে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম রোকেয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে; অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি।”

ওই অনুষ্ঠনে দেশের বিচার বিভাগে নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জুডিশিয়াল সার্ভিসে নারীর অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এটাই ছিল পাকিস্তানের আইন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা সমস্ত আইনগুলো পরিবর্তন করেন, এই আইন পরিবর্তনের পর আমাদের দেশের মেয়েরা জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিতে পারেন।

“আমি সরকারে এসে দেখি আমাদের উচ্চ আদালতে কোনো নারী জজ নেই। তখন আমি উদ্যোগ নিলাম, তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলেছি, প্রধান বিচারপতির সাথে কথা বলেছি, আইনমন্ত্রীকে বলেছি- উচ্চ আদালতে কোনো জজ নিয়োগ দেওয়া হলে যদি কোনো নারী জজের নাম না থাকে, আমি কখনও ওই ফাইল সই করব না, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব না। সেই থেকে যাত্রা শুরু।

কর্মক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে যাওয়া নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মেয়েরা রাজনীতিতেও আছে, অর্থনীতিতে আছে, পররাষ্ট্রনীতিতে আছে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে... সশস্ত্র বাহিনী, সেই সঙ্গে বর্ডার গার্ড সব ক্ষেত্রে কিন্তু নারীদের প্রবেশ সুযোগ আছে এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায?িত্ব পালন করছে। সাংবাদিকতা, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সব ক্ষেত্রে এখন মেয়েরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, এশিয়ার শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নারীরা, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে গর্বের বিষয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জেন্ডার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ। নারীর রাজনীতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। আমাদের স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের ৭০ শতাংশ নারী। তৈরি পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশের বেশি নারীকর্মী। ...।

নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে এগিয়ে নিতে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানে নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আমাদের ছেলে-মেয়ে উভয়ই যেন সমানভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়ে, সব পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।

বক্তৃতায় আঠারো শতকের সময়ে নারীদের সামাজিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম রোকেয়ার সময় মুসলমান মেয়েরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকত। লেখাপড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে তার স্বামী সবসময় তাকে সহযোগিতা করেছে, তার ভাই তাকে সহযোগিতা করেছে। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় উর্দু, বাংলা, আরবি, ইংরেজি, শিক্ষা যেগুলো গ্রহণ করা সেগুলো তার স্বামীর কাছ থেকে শিখেছেন। স্বামীর কাছে আক্ষরিক জ্ঞান এবং বই পড়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি তার ভাইয়ের কাছ থেকেও একটি অনুপ্রেরণা পান। তার স্বামীর নামে একটি স্কুলও তৈরি করেন। “

নারী শিক্ষার পথ খুলতে বেগম রোকেয়াকে কী ধরেন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়, সে বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর কথায় উঠে আসে।

“স্কুল তৈরির পরও তাকে (বেগম রোকেয়া) অনেক বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করতে হয়। কারণ, স্বামীর নামে যে স্কুল করেছিলেন সেখানে ছাত্রী পড়ানো যেত না। তিনি নিজের বাড়ির বাইরে গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসতেন। এটা করতে গিয়ে পরিবারের বাধা এবং অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। তিনি দমে যাননি কখনও। তার সাহসী ভূমিকাটা সব সময় আমরা স্মরণ করি।”

এর আগে সমাজ,নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে গৌরবজ্জ্বল অবদান রাখা পাঁচ নারীর হাতে বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবার যারা বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন তারা হলেন- খালেদা একরাম (মরণোত্তর), ডা. হালিদা হানুম আক্তার, কামরুন্নেসা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), রণিতা বালা এবং নিশাত মজুমদার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক।