মিরাজুল কবীর টিটো : যশোর জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অংশীজনদের সাথে একটি মতবিনিময় সভা হয়েছে। বুধবার কালেক্টরেট সভা কক্ষ অমিত্রাক্ষরে এই সভা হয়। জেলা প্রশাসন সভাটির আয়োজন করে। সভায় কারফিউ শিথিল করে বেনাপোল ও মোংলা পোর্ট সচল, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলা রাখাসহ অন্য জেলার সাথে সমন্বয় করে রাতের বেলায় পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। সেই সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ইস্যু করে যারা দেশের সম্পদের ক্ষতি করেছে ও শিক্ষার্থীদের ইমোশন কাজে লাগিয়ে ঢাকায় নিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছে তাদের চিহিৃত করে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করার বিষয়েও আলোচনা হয়। সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একটি সুবিধাবাধী চক্র সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তারা সেটা পারেনি। আমরা চেষ্টা করেছি মানুষ যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে। বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। বেনাপোল পোর্ট সচল করা হবে। বিনা প্রয়োজনে কারোর বাইরে আসার দরকার নেই। পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, অন্য জেলার প্রশাসনের সাথে কথা বলে ও সমন্বয় করে রাতে পরিবহন চলাচলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হবে। কারফিউ শিথিল করে সন্ধ্যার পর শপিংমল ও দোকান খোলার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মানুষের নিরাপত্তা ও জানমাল রক্ষায় নাশকতাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না। প্রচলিত আইনে শাস্তি দেয়া হবে। এসব কর্মকাণ্ড থেকে সন্তানকে দূরে রাখতে পিতা-মাতাকে সচেতন হওয়ার আহবান জানাই। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, দেশের উন্নয়ন দেখে যাদের গায়ে জ¦ালা ধরে সেই স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ইস্যু করে দেশের সম্পদের ক্ষতি করেছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। সেই সাথে যারা শিক্ষার্থীদের ঢাকায় নিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, পুলিশ অনেক ধৈর্য্যরে পরিচয় দেয়ার কারণে যশোরে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। এজন্য তাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। যেসব জয়গায় মাদ্রাসা আছে সেসব জায়গায় এসব ঘটনা ঘটেছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখতে বেনাপোল ও মোংলা পোর্ট চালু ও পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মর্জিনা আক্তার বলেন, আন্দোলনের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় একাদশের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী পরীক্ষা ও একাদশের ভর্তি কার্যক্রমের সময় জানিয়ে দেয়া হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করতে হবে। বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একএম হাদিউজ্জামান সনি বলেন, বেনাপোল পোর্টে বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মালামাল লোড আনলোড চলছে। এজন্য কারফিউ শিথিল করে বেনাপোল পোর্ট থানায় কার্যক্রম পরিচালনার সময় বাড়ানো উচিত। কারফিউয়ের আওতা মুক্ত রাখতে এখানকার কর্মচারীদের কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। এখান থেকে যাতে নিরাপদে মালামাল সারাদেশে পৌঁছাতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই কথা বলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজিবুদ্দিন গাজী। নাসিবের সভাপতি সাকির আলী বলেন, যশোরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দোকানপাট খোলার ব্যবস্থা করা দরকার। যশোর মটরপার্স, টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সবুজ বলেন, আরএন রোডে অনেক মটরপার্সের দোকান রয়েছে। এখান থেকে সারা দেশে মটরপার্টস পাঠানো হয়। এজন্য কারফিউ শিথিল করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করা জরুরি। যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু বলেন, পরিবহন বন্ধ রাখায় শ্রমিকরা দুর্বিসহ জীবন যাপন করছেন। অন্য জেলার সাথে সমন্বয় করে রাতে বেলা পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। এম ইউসি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যামল দাস বলেন, রপ্তানি পণ্য বিসিক থেকে মোংলা পর্যন্ত পাঠাতে পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন। দৈনিক গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন বলেন, সকলের সহযোগিতার কারণে যশোরের পরিস্থিতি ভালো ছিল। এজন্য বসে থাকলে হবে না। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশের যেসব শত্রুরা নতুন নতুন ফেসবুক আইডি খুলে অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের আইডি বন্ধ করে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে রাখতে পরিবার থেকে কাউন্সিলিং করতে হবে। প্রেসক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান বলেন, যশোরে পুলিশ সহনশীল ছিল বলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রবেশ করতে পারে নি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ বিডি হলে সভা করে অন্য গ্রুপ নিয়ে সমালোচনা করেছে। বিজিবি ৪৯ যশোরের লে. কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, যশোরের পাশাপাশি নড়াইল ও গোপালগঞ্জে দায়িত্ব পালন করছি। নরসিন্দী কারাগার থেকে পলাতক দুষ্কৃতকারীরা লুটকৃত অস্ত্র নিয়ে যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারে তার জন্য নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। আনসারের জেলা কমান্ডডেন্ট সনজয় সাহা বলেন, সব দপ্তরে নিরাপত্তার সার্থে আমাদের সদস্যরা কাজ করছেন। বক্তব্য রাখেন র্যাব-৬ যশোরের কমান্ডার মেজর সাকিব, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বক্কর সিদ্দিকী, সিভিল সার্জন মাহামুদুল হাসান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা, দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাহাবুব আলম লাবলু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন, জেলা দুনীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান, ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মাহাবুবুর রহমান মজনু, সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক প্রফেসর আলাউদ্দীন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. হাফিজ উদ্দীন, যশোর সরকারি কলেজের শিক্ষক প্রভাষক নার্গিস, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন প্রমুখ।