কচুয়া প্রতিনিধি: বাগেরহাটের কচুয়াতে ৫ নম্বর গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুলেখা বিলকিস অনুমতি ছাড়াই স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। দুই মাস ধরে তার বেতন বন্ধ থাকলেও তিনি স্কুলে যোগদান করছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক পদে জুলেখা বিলকিস ২০০৪ সালে ৪ নম্বর বিষেরখোলা সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রথম যোগদান করেন। পরে ফকিরহাট তারপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখ তিনি ৫ নম্বর গজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী পরবর্তী যোগদান করেন। প্রথমদিকে তিনি নিয়মিত ক্লাস করলেও অদৃশ্য শক্তি বলে ২০২৪ সালের দিকে শারীরিক অসুস্থতাসহ নানা তালবাহানা দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শন করে হাজিরা খাতা অনুযায়ী যাছাই সাপেক্ষে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক জুলেখার পাঠদান কৌশল ভালো হলেও তিনি নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। আসলেও তাড়াতাড়ি শেষ করে চলে যান। এতে তাদের পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষক জুয়েলের এধরনের আচরণের কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। তারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক আ. সাত্তার বলেন, তার অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং অতিরিক্ত ক্লাস নিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সহকারী শিক্ষক মুহা. হাসিবুর রহমান বলেন, কচুয়া উপজেলার মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। এখানে প্রাক প্রাথমিকসহ ৬ ক্লাস রয়েছে। প্রতিটি ক্লাসে আলাদা শাখা রয়েছে। ৩৬৫ শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য একজন শিক্ষকের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহীদুর রহমান জানান, বিষয়টি তার নজরে আছে। কোন ধরনের লিখিত ছুটি ছাড়াই তিনি দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত আছেন। একাধিকবার তাকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোন কথার তোয়াক্কা না করে মাঝে মাঝে দু এক সময় মেডিকেল সনদ জমা দিয়ে দিনের পর দিন ছুটি কাটিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বর্তমানে দুমাস যাবৎ তার বেতন বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক জুলেখা বিলকিস বলেন, আমি ৩-৪ বছর ধরে অসুস্থ আছি। নানা উপসর্গ নিয়ে আমি বাগেরহাট খুলনাসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার জন্য ছুটছি। লিখিত কোন ছুটি আমি নেইনি এটা আমি অপরাধ করেছি। কয়েকবার টিও এবং এটিওর কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু দেখা পাইনি। আমার দু মাস ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে আমি বিভিন্ন ধার দেনা করে চলছি চাকরিটা আমার জরুরি দরকার। রূলত আমি দেরিতে যাই এজন্য স্যার আমার উপর একটু অসন্তুষ্ট থাকেন। আমার যদি চাকরি করার সুযোগ থাকে করব না থাকলে কিছু করার নেই। যেহেতু সরকারি চাকরি করি, আইন অমান্য করেছি আমার এখন কিছু বলার নেই। আমি অপরাধ করেছি আমি ক্ষমা চাইতে পারি। যদি আমাকে সুযোগ দেয়া হয় আমি চেষ্টা করব না দিলে কিছু করার নেই। তিনি উল্টো শিক্ষকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তোলেন।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শেখ বদিউজ্জামান বলেন, আমি শুনেছি তিনি দীর্ঘদিন নাকি অসুস্থ আছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মির্জা মিজানুল আলম বলেন, আমি ২ মাস তার বেতন বন্ধ রেখেছি। আমি এখানে মার্চের ৯ তারিখ এসেছি। আমার জানামতে এপ্রিল মাস থেকেই তিনি অনুপস্থিত আছেন। পূর্বের বিষয় আমি বলতে পারব না তবে আমি আসার পর থেকে উনি কোন বেতন ভাতা পাননি। আগে কোন প্রক্রিয়ায় ছুটি নিয়েছেন জানিনা। তবে আমার সময় উনি স্কুলে যান না, মৌখিকভাবে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেয়া আছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগদান করতে পারবেন। এছাড়া তার অনুপস্থিত সময় যখন ৯০ দিন হবে তখন তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। চিঠি দিয়ে ৩ বার কারণ দর্শানোর পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে। তিনি বর্তমানে অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত আছেন। পুনরায় চাকরিতে ফিরতে চাইলে অ-অনুমোদিত ছুটি কাটানোর সময়টা উনি কোথায় ছিলেন এটি নিষ্পত্তি করে তারপরে চাকরিতে যোগদান করতে হবে।