নিজস্ব প্রতিবেদক : তুরস্ক ও মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাড়ে ৩১ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে আলাদা দুই আদম ব্যবসায়ীচক্রের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সোমবার যশোরের আমলী আদালতে আলাদা মামলা হয়েছে। একটি মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য কেশবপুর থানার ওসিকে এবং অপর মামলার আসামিদের প্রতি সমন ইস্যুর আদেশ দিয়েছে আলাদা আদালত। কেশবপুর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম কিবরিয়া ও সদর আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহমত আলী আলাদা এই আদেশ প্রদান করেন।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কেশবপুর উপজেলার চাঁদড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ইছা ও বেলকাটি গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে তরিকুল ইসলামকে তুরস্কে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১২ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাত ও নির্যাতনের অভিযোগে দম্পতিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ইছার পিতা নজরুল ইসলাম মামলাটি করেছেন। আসামিরা হলেন, একই উপজেলার মির্জানগর গ্রামের মৃত রহমত শেখের ছেলে মোশারফ হোসেন ও সাহেব আক্তার এবং মোশারফ হোসেনের স্ত্রী নাসরিন বেগম।
নজরুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেছেন, আসামিরা তার ছেলে ইছা ও আত্মীয় তরিকুলকে তুরস্কে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৪ সালের ১১ মার্চ জন প্রতি ৬ লাখ করে মোট ১২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। শর্ত থাকে যে, ৩ মাসের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থাসহ তাদেরকে তুরস্কে পাঠিয়ে দিবেন আসামিরা। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী তাদেরকে ৩ মাসের মধ্যে তুরস্কে পাঠানো হয়নি। এরপর আসামিরা ইছা ও তরিকুলকে চলতি বছরের ২৫ মে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। আসামিদের কথা মতো নজরুল ইসলাম তার ছেলেসহ ২ জনকে ওই তারিখে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আসামিরা তাদেরকে একটি হোটেলে রেখে দেন। গত ৫ জুন আসামিরা ইছা ও তরিকুলকে বিমানে করে প্রথমে দিল্লি এবং পরে উজবেকিস্তানে নিয়ে যান। উজবেকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার পর আসামিরা তাদেরকে আটকে রেখে আরও ১ লাখ করে মোট ২ লাখ টাকা দাবি এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। মোবাইল ফোনে এ খবর পেয়ে নজরুল ইসলাম আসামিদের কাছে ২ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। এরপরও আসামিরা গত ২৯ আগস্ট ইছা ও তরিকুলকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে আসামিদের কাছে ১৪ লাখ টাকা ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন।
সদর আমলী আদালতে অপর মামলাটি করেছেন শার্শা উপজেলার গোড়পাড়া গ্রামের হাবিবুল্লাহর ছেলে আব্দুল আজিজ। মামলায় তিনি ৩ জনকে আসামি করেছেন। আসামিরা হলেন, সদর উপজেলার খাজুরার গোলাম রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন, বাঘারপাড়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ইছহাকের ছেলে হারুন অর রশিদ ও ঢাকার মিরপুর শেওড়াপাড়ার শেখ দবির উদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন।
মামলায় আব্দুল আজিজ উল্লেখ করেছেন, আসামিরা তাকেসহ ৫ জনকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন সময় মোট ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। এ জন্য তারা তাদের পাসপোর্ট নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও আসামিরা তাদেরকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ব্যর্থ হন। এ কারণে ভুক্তভোগীরা আসামিদের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চাইলে তারা নানাভাবে ঘোরাতে থাকেন। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট আসামিদের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত চাওয়া হয়। এ সময় আসামিরা টাকা ও পাসপোর্ট ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।