বিল্লাল হোসেন: যশোরে ‘মারণাস্ত্র’ হিসেবে ধারালো অস্ত্র ‘ছুরি’ ব্যবহার করা হচ্ছে । এতে গত ১৩ দিনে ১৬ জনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরমধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছিনতাই, মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করাসহ বিভিন্ন শত্রুতার জেরে উঠতি বয়সি ও কিশোর গ্যাং সচরাচর ছুরি ব্যবহার করছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছুরিকাঘাতে নিহতের নাম চঞ্চল হোসেন (৩০)। তিনি যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামের মধু গাজীর ছেলে।
যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ অক্টোবর বেলা ১১ টার দিকে ডাকাতিয়া গ্রামের মধু গাজীর বাড়ির সামনে ইয়াবা বিক্রি করছিলো প্রতিবেশী রবিউলের লোকজন। ইয়াবা বিক্রিতে বাধা দেয়ায় রবিউল তার ছেলে মুন্না, ভাই বিল্লাল ও শাহজাহান মিলে মধু গাজীকে মারধর করে। এ সময় তার ছেলে চঞ্চল প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। ছেলেকে রক্ষা করার জন্য মুধু গাজী এগিয়ে আসলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। স্থানীয়রা বাবা ছেলেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির কিছু সময় পর চঞ্চলের মৃত্যু হয়। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত রবিউল, মুন্না ও বিল্লালকে আটক করেছে।
গত ১২ অক্টোবর যশোরে শহরের ষষ্টিতলা ও সদরের শেখহাটি তমালতলা এলাকায় দুইজনকে ছুরিকাঘাতে জখম করে দুর্বৃত্তরা। আহতরা হল ষষ্টিতলার লিটন হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২০) ও বারান্দী পশ্চিমপাড়ার বাবর আলীর ছেলে নয়ন হোসেন (২২)। স্থানীয়রা তাদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
গত ১১ অক্টোবর শহরের বারান্দীপাড়া বউ বাজার ও দড়াটানার পিয়াজু গাড়ির স্ট্যান্ডে দুইজন ছুরিকাহত হয়। তারা হলেন বারান্দীপাড়ার মোস্তফার ছেলে সোহাগ হোসেন (২৫) ও সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোহাম্মদ বাবু (৩৮)।
গত ৯ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শহরতলী বকচর হুঁশতলার কবরস্থান এলাকায় শাকিল হোসেন (২০) নামে এক হোটেল শ্রমিক ছুরিকাহত হয়। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। আহত শাকিল বকচর হুঁশতলার গোলাম মোস্তফার ছেলে।
একই দিন বকচর হুঁশতলায় পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে মারুফ হোসেন (২১) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করা হয়। তিনি বকচর হুশতলার ফারুক হোসেনের ছেলে।
গত ৮ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের কামালপুর সুতিঘাটায় স্বামী স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে জখম করে দুর্বৃত্তরা। আহতরা হলেন সুতিঘাটা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে আব্দুল মালেক (৩৩) ও মালেকের স্ত্রী রিনি খাতুন (২৮)। স্ত্রীকে কু প্রস্তাব দেয়ার প্রতিবাদ করার জেরে সুতিঘাটা গ্রামের মহিশ সরদারের ছেলে ইলিয়াস ও শাহরিয়ার এ ঘটনা ঘটায়।
গত ৬ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা কাজীপুরে সাকিব হোসেন (২৫) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ার জেরে স্থানীয় আবু সাঈদ ও মিরাজ তাকে ছুরিকাঘাত করে। আহত সাকিব বলাডাঙ্গা কাজীপুর গ্রামের সুরুজ হোসেনের ছেলে।
একই দিন শহরের বারান্দীপাড়া ঢাকা রোড ব্রিজ সংলগ্ন আব্দুল্লাহর চায়ের দোকানে ছুরিকাহত হন রফিকুল ইসলাম (৩০)। তিনি বারান্দী মাঠপাড়ার আরশাদ আলীর গাজীর ছেলে। গাঁজা সেবন করার জন্য তামাক পাতা কিনে এনে দিতে রাজি না হওয়ায় ল্যাংড়া টুলু তাকে ছুরিকাঘাত করে।
গত ৫ অক্টোবর ইয়াবা বিক্রি করতে নিষেধ করার জেরে শহরের বারান্দীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে শফিকুল ইসলাম কবির (৩১) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে জখম করা হয়। আহত কবির বারান্দী মোল্যাপাড়ার আবু তালেবের ছেলে।
আহত কবির জানান, স্থানীয় ফয়সালের নেতৃত্বে এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা বিক্রি করা হয়। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার কারণে ইয়াবা বিক্রি করতে নিষেধ করায় ফয়সাল তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। রোববার বিকেলে একা পেয়ে ফয়সাল ও তার শ্বশুর মিলে তাকে ছুরিকাঘাতে জখম করে।
গত ৩ অক্টোবর যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রায়মারীতে দুই ভাইকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। আহতরা হলেন রায়মারী গ্রামের মৃত কাশেম মোল্যার ছেলে মোশরাফ মোল্যা (৫২) ও আব্দুল হালিম (৪০)। সরকারি জমি দখলে করা নিয়ে গোলযোগের জেরে এ ঘটনা ঘটে।
একের পর এক ছুরিকাঘাতের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা বলেছেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে চাকুর ব্যবহার যশোরে এক ধরনের ঐতিহ্য হয়ে গেছে। চাকুর বহন সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এটা ব্যবহার করছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবুল বাশার জানান, পারিবারিক বিরোধ অথবা পূর্ব শত্রুতার জেরে এসব ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশি তৎপরতার কারণে এখন ছুরিকাঘাত করে ছিনতাই বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নেই বললে চলে। বিচ্ছিন্নভাবে ছুরির অবাধ ব্যবহার ঠেকাতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।