নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের গণশুনানিতে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। শুনানিতে ৩৭টি দপ্তরের ৭৫টি অভিযোগের শুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কাজ করে দিতে পাকা কলা ঘুষ নেয়ায় যশোর জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।
রোববার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিকালে এসব বিষয় উঠে আসে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
সময়ের সাথে দুর্নীতির ধরণ পরিবর্তন হচ্ছে মন্তব্য করে শুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন-‘যতই দিন যাচ্ছে, ততই দুর্নীতি বাড়ছে। দুর্নীতির ধরণ চেঞ্জ হচ্ছে। মানুষ পারাপার করেও টাকা আদায় করা যায়, দুর্নীতি করা যায় এই যশোরে এসে নতুন দুর্নীতি ধরণ শুনলাম। স্বৈরাচারের দোসর হোক, মামলার আসামি হোক, তারা যশোরের রাজনীতির এলিটদের মাধ্যমে ভারতে পার হচ্ছে। এটা যদি হয়, তাহলে রাষ্ট্রের প্রত্যাশা বিঘ্নিত হবে। এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
‘রুখবো দুর্নীতি, গড়বো দেশ; হবে সোনার বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গণশুনানির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত যশোর কার্যালয়। শুনানিতে জেলার সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ৩৭টি দপ্তরের ৭৫ টি অভিযোগের উপর শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানি শেষে কিছু বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ ও কিছু বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান। দুর্নীতির কারণেই বিগত সরকার পতন হয়েছে মন্তব্য করে দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, সুষ্ঠু ও আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন হবে, সেটার সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশটাকে ভালো রাখতে সৎ প্রার্থীকে বাছাই করতে হবে। আমরা যদি ১৫ বছরের ইতিহাস দেখি, সরকারের রন্ধে রন্ধে ছিলো দুর্নীতি। বিগত সরকারের এই অবস্থা হওয়ার পিছনে ছিলো দুর্নীতি। ফলে দুর্নীতিগ্রস্তকে বেছে নিবেন না। সেটিই হবে রাষ্ট্রের প্রতি সুবিচার। দুদক দুর্নীতি একেবারে নির্মুল করতে পারবে এটা প্রত্যাশিত না। তবে কমানো যাবে। আমরা শুনানির মাধ্যমে জনগণকে কর্মকর্তাদের মুখোমুখি করে দিচ্ছি না। আমি দুই পক্ষের মধ্যে সম্পৃক্ততা তৈরি করছি। এতে দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে। এই যশোর থেকে ন্যায়ের ও দুর্নীতি মুক্ত যাত্রাটা শুরু হবে।’
শুনানিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী।
উদ্বোধনী পর্ব শেষে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় গণশুনানি শুরু হয়। শুনানিতে ৩৭টি দপ্তরের ৭৫টি অভিযোগের শুনানি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে বিভিন্ন ধরণের আইনগত নির্দেশনা দেন।
এর মধ্যে যশোর জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেনকে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন। কাজ করে দিতে পাকা কলা ঘুষ নেয়ার কথা স্বীকার করায় এ নির্দেশ দেয়া হয়।
রোববার যশোরে গণশুনানি চলাকালে দুদক কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলী আকবার আজিজী এই আদেশ দেন। অবশ্য অভিযোগকারী রুস্তম আলীর দাবি, তার কাছ থেকে পাকা কলা ছাড়াও ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন আলমগীর হোসেন। এরপর আরও ৬ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন, যা না দেয়ায় জেলা পরিষদের জমির ডিসিআর অন্যকে দিয়ে দেন ওই কর্মকর্তা।
বিআরটিএ অফিস এলাকায় দালালের আধিপত্যের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান বিআরটিএ যশোরের সহকারী পরিচালক এএসএম ওয়াজেদ হোসেনকে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে দালাল নির্মূলের নির্দেশ দেন এবং আলোচিত দালাল সোহেলকে আটকের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও খাবারের মানোন্নয়নের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি হাসপাতালেও দালাল উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেন। হাসপাতালের কর্মচারী পবিত্র বিশ্বাস এক শিশুর কানের চিকিৎসা করতে গিয়ে তার কানের পর্দা ফাটিয়ে দেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্মচারীর বিরুদ্ধে গৃহিত ব্যবস্থা সন্তোষজনক না হওয়ায় চেয়ারম্যান উষ্মা প্রকাশ করেন।
ভৈরব নদ ও মুক্তেশ্বরী নদী দখল দূষণের ব্যাপারে অভিযোগ উত্থাপতি হলে শুনানি থেকে পরিবেশ অধিদপ্তর, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, পৌরসভা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যৌথ কমিটি করে করণীয় নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া হয়।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ওমর ফারুকের নিয়োগসহ বিভিন্ন নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় চেয়ারম্যান দুদক যশোর কার্যালয়কে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন।
এছাড়াও শিক্ষা অফিস, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌরসভাসহ বিভিন্ন সরকারি আধাসরকারি, স্ব্ায়ত্বশাসিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অভিযোগ শুনানি করে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বিভিন্ন নির্দেশ প্রদান করেন।