অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগরে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অবৈধ চুল্লির ভয়াবহ দৌরাত্ম্যে পরিবেশ ও জনজীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। দিনের পর দিন চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হচ্ছে, উজাড় হয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল, আর শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সবকিছু প্রকাশ্যে চললেও প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা না থাকায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ বাড়ছে পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের আমতলা ও সোনাতলা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দুই শতাধিক অবৈধ কয়লা চুল্লি সক্রিয় রয়েছে। এসব চুল্লিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে। কয়লা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ফলে একদিকে বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য।
চুল্লি থেকে নির্গত ঘন কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকা সারাক্ষণ ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা থাকে। এতে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখের জ্বালা, ত্বকের রোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। দিন দিন এই এলাকায় বসবাস করাই দায় হয়ে পড়ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মিলেই এসব অবৈধ চুল্লি পরিচালনা করছে। তারা এলাকায় এতটাই শক্তিশালী যে, ভয়ের কারণে সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। প্রতিবাদ করলেই নানাভাবে হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অবৈধ চুল্লি বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন এবং বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা ক্রমেই ভেঙে পড়ছে।
স্থানীয়দের জোর দাবি, শুধু চুল্লি ভেঙে বা গুঁড়িয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। চুল্লি মালিক, সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে অল্প সময়ের মধ্যেই আবার নতুন করে চুল্লি গড়ে উঠবে।
এ বিষয়ে যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন,
“চুল্লিগুলোর বিষয়ে আমরা অবগত। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ চুল্লি ধ্বংসে অভিযান চালানো হবে।”
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ সালাউদ্দিন দিপু বলেন, “খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রশাসন ও যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের গড়ে তোলা ১১৩টি অবৈধ কয়লা চুল্লি ধ্বংস করা হয়েছিল। তবে মাত্র এক মাসের মধ্যেই অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে পুনরায় চুল্লি স্থাপন করে আগের মতোই অবৈধ কার্যক্রম চালু করা হয়। দীর্ঘ দুই বছর পার হলেও ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।