সাতক্ষীরার গর্ব সাফ জয়ী অধিনায়ক সাবিনাকে সংবর্ধনা, হাত নেড়ে অভিনন্দন শহরবাসীকে

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ , ২০২৪, ১১:৪৭:১৪ পিএম

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা : সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়ানশিপ জয়ী বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে নিজ জেলা সাতক্ষীরায় সংবর্ধনা দিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও সাবিনার নিজ হাতে গড়া একাডেমি ওরিয়ার স্পোর্টস একাডেমিসহ বিভিন্ন ক্রীড়া একাডেমির নেতৃবৃন্দ। শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পর তাকে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। সকাল থেকে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজের সামনে ফুল নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নেতৃবৃন্দ, ওরিয়ার স্পোর্টস একাডেমির নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অপেক্ষা করতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০ টার সময় সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজের সামনে কৃতি খেলোয়াড় সাবিনা উপস্থিত হলে ফুল দিয়ে সাবিনাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেয়া হয় এবং সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান মুক্তি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মীর তাজুল ইসলাম রিপন, নির্বাহী সদস্য কাজী আক্তার হোসেন, ফারহা দীবা খানা সাথী, শিমুল শামস্, ওরিয়ান স্পোর্টস একাডেমির খোলোয়াড় খোকন, সাতক্ষীরা ইয়ামাহ ডিলার পয়েন্টের শাহীন, বাপী। ফুল দিয়ে নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সালমাকে বরণ ও শুভেচ্ছা জানানোর পর তাকে একটি পিকআপের উপরে চড়িয়ে বিভিন্ন বাদ্য বাজনা বাজিয়ে সাতক্ষীরা পুরো শহর প্রদক্ষিণ করেন। এ সময় সাতক্ষীরার গর্ব সাবিনা, সাতক্ষীরাবাসীর পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে পুরো সাতক্ষীরা শহর আনন্দ আর উল্লাসে মুখোরিত হয়ে উঠে। এ সময় রাস্তার দু’ই পাশে দাঁড়িয়ে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের নারী ও পুরুষ হাত নেড়ে সাবিনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এ সময় হাত নেড়ে সাবিনাও সাতক্ষীরাবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। পুরো সাতক্ষীরা শহর প্রদক্ষিণ শেষে বেলা ১ টার দিকে সাবিনা খাতুন শহরের সবুজবাগ এলাকার তার নিজ বাড়িতে যান। এর আগে সাবিনা নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সাথে তার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। প্রথমেই তিনি নিজ হোম টাউন সাতক্ষীরাবাসীকে এই সংবর্ধনা আয়োজন করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান সব সময় ভাল খেলার মাধ্যমে মানুষের মুখের হাঁসিটা দেখার জন্য এবং নিজের ক্যারিয়ারটা ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। তিনি আরও বলেন দিন শেষে ১৬ কোটি মানুষই আমাদের। নিজ জন্মভূমি ও নিজ হোম টাউন এটা অন্যরকম একটি ভালবাসা।  
সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ও সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় সাতক্ষীরা ইয়ামাহ সাতক্ষীরা ডিলার পয়েন্ট, পেস্টিজ মটরস্ ও ওরিয়ান স্পোর্টস একাডেমি এই সংবর্ধনার আয়োজন করে। 
সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ ২০২২ শিরোপাজয়ী এবং টুর্নামেন্টের ডাবল হ্যাট্রিকসহ সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা খেলোয়াড় সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান সাবিনা খাতুন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন ২০০৭ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ফুটবলে পা রেখেছিলেন। ২০০৯ সালেই জাতীয় দলে সুযোগ পান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাবিনার উঠে আসার পেছনে স্থানীয় কোচ আকবার আলীর অবদানই বেশি বলে তিনি স্মরণ করেন তাকে। আকবার আলী মারা গেছেন ৩ মাস আগে। তিনি জীবিত থাকলে আজকে সব চেয়ে বেশি খুশি হতেন। শহরের চালতে তলা এলাকায় জ্যোতি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামের একটি আবাসিক সংগঠন গড়ে তোলেন তিনি। সাবিনার হাতে খড়ি সেই প্রতিষ্ঠান থেকে। 
গোল মেশিনখ্যাত জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনার লক্ষ্য এবার আসিয়ান গেমস। সাতক্ষীরায় শুক্রবার সকালে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ কালে সাবিনা এসব কথা বলেন। এছাড়া পশ্চাৎপদ সমাজে একজন মেয়েকে খেলোয়াড় জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য প্রচুর সংগ্রামের কথা বলেন তিনি। সাবিনা জানান তার গড়ে উঠার পিছে একমাত্র বড় অবদান তার আকবার স্যার। ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় দলে আমার পদযাত্রা। ২০১৬ সালে আমি অধিনায়ক হই। সেই বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। সাতক্ষীরার ক্রীড়া অঙ্গন ও নারী ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ও স্থানীয় দৈনিক যুগের বার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আ.ন.ম আবু সাঈদ দু’জনে মিলে ওরিয়ার স্পোর্টস নামে একটি একাডেমি গড়ে তুলেছেন। কিন্তু সাতক্ষীরায় তেমন কোনো খেলার মাঠ না থাকায় খেলোয়াড়দের সঠিক ভাবে অনুশিলন করানো সম্ভব হয় না। একটি মাঠের প্রয়োজন। এজন্য তিনি জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপারসহ সরকারের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
  শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে  দক্ষিন এশিয়া গেমস্ সাফ নারী ফুটবল বিজয়ী এই কৃতি খেলোয়াড়কে সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির।