বর্তমান চেয়ারম্যানের ছেলেসহ ৪ জন পুলিশ হেফাজতে

চুড়ামনকাটিতে সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক আলম খুন

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০৫:৫১:৫০ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নার সমর্থক আলমগীর হোসেন ওরফে আলম (৪৫) খুন হয়েছেন। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে দুর্বৃত্তরা তাকে পিটিয়ে জখম করে। বিকেল ৪টার দিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাল টেপ মোড়ানো দুটি বোমা সদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ বর্তমান চেয়ারম্যান দাউদ হোসেনের দুই ছেলেসহ ৪ জনকে হেফাজতে নিয়েছে। তবে পুলিশ দুই জনকে হেফাজতে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 
জানা গেছে, আলমগীর হোসেনের পৈত্রিক বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। তার পিতার নাম শামসুল মন্ডল। প্রায় ২০ বছর আগে তিনি পরিবার নিয়ে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নার ধানের চাতালে থাকতেন। বর্তমানে চুড়ামনকাটি রেলস্টেশন সংলগ্ন হঠাৎ পাড়ায় বসবাস করতেন। এখানে আসার পর থেকেই আলম সাবেক চেয়ারম্যান মুন্নার সাথে থাকতেন। ফলে বিশ্বস্ত একজন কর্মী হয়ে ওঠেন। 
নিহতের স্ত্রী রেকসোনা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, সাবেক চেয়ারম্যানের সাথে চলাফেরার কারণে বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন তার স্বামী আলমগীর হোসেনের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলো। এরই জের ধরে শুক্রবার দুপরে চেয়ারম্যান দাউদ হোসেনের ছেলে তানভীর রকসি, ভাইপো সাদ চুড়ামনকাটি গ্রামের মেহেদী হাসান রুনু, মামুন, মানিক হোসেনসহ একদল দুর্বৃত্ত আলমগীরকে চুড়ামনকাটি বাজার থেকে কাজির বাগান এলাকার পুকুরের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে পিটিয়ে দুই হাত পা ভেঙে দেয়াসহ নির্মম নির্যাতন করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আলমগীর। 
রোকসানা আরও জানান, সাবেক চেয়ারম্যান মুন্নার বিশ্বস্ত কর্মী ও সমর্থক হওয়ার কারণে তার স্বামী আলমগীরকে বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন খুন করেছে। 
সাজিয়ালী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সেলিম হোসেন জানান, খবরটি শোনার পর তিনি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। মুমূর্ষু অবস্থায় আলমগীরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে তার মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে লাল টেপ মোড়ানো দুটি বোমা সদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, সন্ধ্যায় যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল)  বেলাল হোসাইনের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। 
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে আলমগীর হামলাকারীদের নাম বলে গেছে। তার বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করা হয়েছে। 
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্না জানান, আলমগীর তার সাথে চলাফেরার কারণে বর্তমান চেয়ারম্যান দাউদ হোসেনের লোকজন ক্ষুব্ধ ছিলো। বিগত দিনে এলাকা ছাড়ার করার জন্য একাধিকবার হুমকিও দিয়েছে। এরপরেও আলমগীর তার সাথে থাকতেন। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে রুনুর নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে খুন করেছে। ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা বাজারে উপস্থিত অনেকেই দেখেছেন। কেননা বাজারের ঘোনা রোড দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মুন্না আরও জানান, আমাকে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করতে প্রতিপক্ষ আলমকে খুন করেছে। 
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন জানান, আলমগীর হোসেন ওরফে আলম সাবেক চেয়ারম্যান মুন্নার প্রধান ক্যাডার ছিলেন। তিনি মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ নানা অপরাধ করতেন। ফলে আলমের শত্রুর অভাব ছিলো না। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আলম প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছে। এই ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান মুন্না ও নিহতের পরিবারের লোকজন আমার ছেলেসহ নিরীহ মানুষদের ফাঁসানোর জন্য তৎপর রয়েছে। চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন আরও জানান, প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক। নিরীহ মানুষদের হয়রানী না করার আহবান জানান তিনি। 
যশোর সদর উপজেলার যুবলীগ নেতা চুড়ামনকাটি গ্রামের মেহেদি হাসান রুনু মুঠোফোনে জানান, ঘটনার দিন সন্ত্রাসী আলম একটি প্যাকেটে বোমা সদৃশ্য বস্তু নিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলেন। অপরাধ কর্মকাণ্ড করতে পারে ভেবে লোকজন ধরে তাকে পিটুনি দিয়েছে। তিনি ঘটনার সাথে জড়িত নন। 
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মামুন হোসেন মুঠোফোনে জানান, আলমগীরকে জখমের ঘটনা জানতে পেরে তিনি আরও  প্রশাসন ও মিডিয়া কর্মীদের খবরটি জানান। এখন শুনছি ঘটনার সাথে তিনি জড়িত বলে প্রচার করা হচ্ছে।
এদিকে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হত্যা ঘটনার পর পুলিশ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে জাকির হোসেন দারা, তারভীর রকসি, চুড়ামনকাটি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বর) মাহবুব হাসান রানু ও মৃত আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে মানিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছেন। রানুকে নিজ বাড়ি ও বাকি তিনজনকে চুড়ামনকাটি বাজার থেকে আটক করে। 
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মুন্নার সমর্থক আলমগীরকে বর্তমান চেয়ারম্যান দাউদ হোসেনের লোকজন খুন করেছে বলে প্রাথমিক তথ্য মিলেছে। চেয়ারম্যানের এক ছেলেসহ দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত থানায় মামলা রেকর্ড হয়নি।